চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১

যে আলোকচিত্রে আছে রোম্যান্টিক আবহ ও অনুভব

গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় অনুষ্ঠিত হল ‘থার্ড আই’-এর আলোকচিত্র প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষ।কলকাতা-ভিত্তিক একটি আলোকচিত্র চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র ‘থার্ড আই’। গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশিষ্ট আলোকচিত্রী অতনু পালের নেতৃত্বে এই প্রতিষ্ঠান আলোকচিত্র চর্চায় নিমগ্ন রয়েছে। প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন কর্মশালার পাশাপাশি তাঁরা নিয়মিত প্রদর্শনীও করে থাকেন। সম্প্রতি গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় অনুষ্ঠিত হল তাঁদের পঞ্চদশ আলোকচিত্র উত্‌সব।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০০

কলকাতা-ভিত্তিক একটি আলোকচিত্র চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র ‘থার্ড আই’। গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশিষ্ট আলোকচিত্রী অতনু পালের নেতৃত্বে এই প্রতিষ্ঠান আলোকচিত্র চর্চায় নিমগ্ন রয়েছে। প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন কর্মশালার পাশাপাশি তাঁরা নিয়মিত প্রদর্শনীও করে থাকেন। সম্প্রতি গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় অনুষ্ঠিত হল তাঁদের পঞ্চদশ আলোকচিত্র উত্‌সব। ১৬ জন শিল্পীর আলোকচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে এখানে। এই প্রদর্শনীর শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘রঙিন নৌকোয় রোদের টুকরোরা’

এই নামের ভিতর যে ছন্দোময় রোমান্টিক আবহ আছে, শিল্পীদের ছবির মধ্যেও সেটা অনুভব করা যায়। তাঁদের নিয়মিত আলোকচিত্র চর্চা ও প্রদর্শনীর স্ট্রেট ফোটোগ্রাফির প্রচার ও প্রসার। আলোকচিত্রকে দৃশ্যকলার অন্যান্য ধারা, যেমন চিত্র বা ভাস্কর্যের মতো নান্দনিক গুরুত্বে অভিষিক্ত করে তোলা। সেই গুরুত্ব বিদেশে বহু দিন ধরে স্বীকৃত। আমাদের দেশে আলোকচিত্র সাধারণের কাছে এখনও একটু অবহেলিত। ‘থার্ড আই’ আলোকচিত্রের এই নান্দনিক মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী।

Advertisement

প্রকৃতপক্ষে আলোকচিত্রের প্রাথমিক দায় প্রকৃতিকে তার স্বাভাবিকতায় প্রতিরূপায়িত করা। শৈল্পিক অন্তর্দৃষ্টিই এ ব্যাপারে শিল্পীকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। এই প্রদর্শনীর অধিকাংশ ছবিতেই সেই অন্তর্দৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়। সঞ্জীব দাসের ছবিটির শিরোনাম ‘নাও-শতদল’, নদীর বুকে অজস্র ডিঙি-নৌকা ছড়িয়ে রয়েছে। দু’পাশে তাদের ছড়িয়ে থাকার মধ্যে সুষমাময় ছন্দ রয়েছে। যা অনেকটা পদ্মদলের বিন্যাসের মতো। মাঝখান দিয়ে একটি নৌকা বেয়ে যাচ্ছে কয়েক জন মানুষ। জলের উপরে বৈঠা প্রসারিত রয়েছে দু’পাশে। তীরের ঘাটে দু’একজন মাত্র মানুষ স্নান করছে বা বসে আছে। নৌকার স্থিরতার ও গতিময়তার বিশেষ একটি মুহূর্তকে রূপবদ্ধ করেছেন শিল্পী। দিলীপ মাইতির ‘রাজসাক্ষী’ ছবিটিতে অনেকটা নিও-ক্লাসিক্যাল পেইন্টিং-এর আভিজাত্যপূর্ণ শান্ততা ও গাম্ভীর্য অনুভব করা যায়। নীল আকাশের নীচে বিস্তৃত হয়ে আছে নির্জন অট্টালিকার শুভ্র স্থাপত্য। সামনে সবুজ ঘাসে মোড়া প্রাঙ্গণ। অর্ঘ্য কুণ্ডুর ‘উত্তরণ’ ছবিটিতে দুজন শ্রমিক বাঁশে ঝোলানো দুটি ভারী পাত্র নিয়ে বাঁধানো পথে উপর দিকে উঠে যাচ্ছে। সামনে একটি বড় গাছ। তাতে অজস্র হলুদ ফুল ফুটে আছে। উপরের সুনীল আকাশ বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে সেই ফুলের সমারোহে। সেই সৌন্দর্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দুজন শ্রমিক। দেবায়ন করের ‘জীবনবিম্ব’ গোধূলির আলোয় বিম্বিত একজন মানুষের প্রতিরূপায়ণ। নীল আকাশে সাদা মেঘের সমারোহ। সম্মুখপটে আলোছায়াময় প্রান্তরে চার হাত-পা ছড়িয়ে আলোর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে একজন মানুষ। তাঁরই ছায়া পড়েছে একটু দূরে। ব্যক্তি ও তার ছায়ার অশ্রুত কথোপকথন ছবিটির বিষয়। জয়তী পালের ‘মেঘের ভেলায়’ ছবিটি তোলা হয়েছে মেঘের উপর দিয়ে ভেসে যাওয়া বিমান থেকে।

সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ১২টি ছবি ছিল অতনু পালের। ক্যানভাসের উপর বড় আকারে ছাপা হওয়ার জন্য সকলের ছবিই বিশেষ এক নান্দনিক মাত্রা পেয়েছে। অতনু তাঁর ছবিতে স্বাভাবিকতাকে অত্যন্ত শৈল্পিক ভাবে কল্পরূপের দিকে নিয়ে যান। এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত ‘কালদ্রষ্টা’ ছবিটি। একটি পুরনো ভগ্নপ্রায় অথচ আভিজাত্যপূর্ণ অট্টালিকার স্থাপত্য নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। চারপাশে পরিবৃত ঘন আঁধার। সেই অন্ধকারের মাঝখান দিয়ে স্থাপত্যের কিছু কিছু খিলান ও গম্বুজ দৃশ্যমান। পুরনো ইটের মধ্যবর্তী রেখাগুলো বিচিত্র বুনোট সৃষ্টি করেছে। অট্টালিকার সেই দৃশ্যমান অংশের উপরে বাঁ পাশের অন্ধকারে প্রায় উপবৃত্তাকারে আলো পড়েছে। স্থাপত্যের অংশকে অন্ধকারের প্রেক্ষিতে সেই আলো এক অলৌকিক মুখের মতো প্রস্ফুটিত করেছে। একেবারে কর্ণ বরাবর চিত্রক্ষেত্রের বিপরীত প্রান্তে আর এক টুকরো আলোকিত প্রাচীর বের করে এনেছেন। এই একটি দৃষ্টান্ত যা থেকে বোঝা যায় আলোকচিত্র স্বাভাবিকতাকেই কী ভাবে অলৌকিকে রূপান্তরিত করে। অতনু-র ‘অধরা’, ‘উলটপুরান’, ‘মানব জমিন’, ‘শহরে বৃষ্টি’ ইত্যাদি ছবি অত্যন্ত শিল্পঋদ্ধ ভাবে সেই কাজটিই করেছে।

অন্যান্য শিল্পীর মধ্যে ছিলেন এন.কে.সাহা, পি.কে.দেবনাথ, আপনবরণ বিশ্বাস, অন্বেষা চট্টোপাধ্যায়, সংগীতা ধারা প্রমুখ।

আরও পড়ুন
Advertisement