পূজার আনন্দে মেতে ওঠেন প্রবাসীরা
জানি, দেশে এখন আকাশ পরিষ্কার, ঝকঝক করছে । চারিদিকে খুশি খুশি গন্ধ। কাশফুলে দোল দিয়ে যাচ্ছে ফুরফুরে হাওয়া। আকাশের তুলোর মেঘ আপন মনে ছবি আঁকছে। বাতাসে যে খুশি খুশি গন্ধ, সেটাই বলে দিচ্ছে মা আসছেন ।
শরতের সেরা পার্বনে বাঙালি যেখানেই থাকুক না কেন ঘরে ফিরে আসে । অন্তত আসার চেষ্টা করে। এমনটাই দেখে এসেছি ছোটবেলা থেকে। কিন্তু নিজের আর ঘরে ফেরা হয় না। তবে আমরা যারা ‘প্রবাসী’ বাঙালি হয়ে গিয়েছি তাদের জন্য ‘মা’ এখনেও আসছেন । ‘মা’ কে আসতেই হচ্ছে আমাদের টানে । আমরা ছোটবেলায় যে ভাবে দুর্গাপুজোয় হইহুল্লোড় আর আনন্দে মেতেছি, পরবর্তী প্রজন্মকেও যেন সেই সুপবন স্পর্শ করে যায়, এখন তারই প্রাণপণ চেষ্টা। শিউলির সুবাস না পেলেও সাত সমুদ্রের পারে আকাশের দিকে তাকিয়ে মা দুর্গা কে আবাহন করি।
জর্জিয়া স্টেট এর আটলান্টায়
জর্জিয়া স্টেট এর আটলান্টায় বেশ কয়েক বছর পুজো দেখছি। এর আগে নিউ জার্সির পূজাও দেখেছি দু’বছর। আটলান্টায় বেশ কয়েকটা পুজো। এ-বি-এফ, বাগা, পূর্বাশা ও পূজারী। আমি এই বছর যুক্ত হয়েছি ‘পূজারী’-র পুজোর সঙ্গে । সারা সপ্তাহ তুমুল ব্যস্ততা। এ তো কলকাতা নয়, বাচ্চার স্কুলে পুজোর ছুটি পড়বে...। তাই ছেলেমেয়েদের স্কুল, অফিস এ সব সামলেও বাঙালি উইক এন্ডের ছোট্ট পরিসরে তাদের প্রিয় উৎসব দুর্গাপুজোকে সাজিয়ে তোলে।
আরও পড়ুন: আল্পস থেকে সপরিবারে মা আসেন মিউনিখের মাতৃমন্দিরে
আমাদের ‘পূজারী’র দুর্গাপুজো এ বার ৩২ বছরে পা দিয়েছে। অন্য বছরের মতোই নানা অনুষ্ঠানের জন্য মেতে উঠেছে ছোট থেকে বড় প্রায় সকলেই। প্রত্যেক উইকেন্ডেই চলছে রিহার্সাল। আজ এর বাড়ির বেসমেন্ট তো কাল ওর বাড়ির ড্রইংরুম, খাওয়া দাওয়া আড্ডায় রিহার্সাল পর্ব জমজমাট।
আরও পড়ুন: বিয়ের পর প্রথম পুজো, কেমন কাটাচ্ছেন তানিয়া?
পুজো হবে বার্কমার হাই স্কুলে। প্রতিমা ও প্যান্ডেলের সাজসজ্জায় ব্যস্ত পূজারীর সদস্যরা। এ বার এখানে পুজো তিন দিন। ১৯,২০,২১ অক্টোবর। চার দিনের পুজো তিন দিনে সারা হয় পূজারীতে। প্রথম দিন ষষ্ঠী, দ্বিতীয় দিন সপ্তমী-অষ্টমী ও তৃতীয় দিন নবমী-দশমীর পুজো। ষষ্ঠীর বোধন থেকে সন্ধিপুজো, কুমারীপুজো, সবকিছুই থাকবে। আরও থাকবে ধুনুচি নাচ ও সিঁদুর খেলা।
আর খাওয়াদাওয়া ছাড়া তো বাঙালির যে কোনও অনুষ্ঠানই অসম্পূর্ণ। প্রথম দিনে পোলাও, চিকেন, দ্বিতীয় দিন রুইমাছ, চিকেন মাঞ্চুরিয়ান, তৃতীয় দিন পাঁঠার মাংস। বাচ্চাদের জন্যও থাকছে আলাদা ব্যবস্থা। খিচুড়ি ভোগেরও ব্যবস্থা থাকছে। এ ছাড়া মূল আকর্ষণ হল কলকাতা স্পেশাল স্ট্রিট ফুড, ঝাল মুড়ি থেকে শুরু করে ফুচকা , রোল, চপ এর স্টল। কলকাতা থেকে আনা শাড়ি, গয়নার স্টল ও থাকবে ।
কলকাতা থেকেও আসছেন বিশিষ্ট শিল্পীরা। প্রথমদিন থাকছেন শুভমিতা, দ্বিতীয় দিন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী ও তৃতীয় দিন থাকছেন তোর্সা সরকার। এঁদের সঙ্গে থাকবে পূজারীর সদস্যদের ট্যালেন্ট দেখানোর উৎসাহও কম নয়। বাচ্চাদের মজার নাটক নন্টে ফন্টে, বড় ও বাচ্চাদের মিলিত প্রয়াসে নৃত্যনাট্য ‘লাইট ওভার ডার্কনেস’ । এ ছাড়াও রয়েছে অনেকরকম গানের অনুষ্ঠান । বিশেষ আকর্ষণ অষ্টমীর সকালে বাচ্চাদের ফ্যান্সি ড্রেস কম্পিটিশন। পূজারীর স্পেশাল ম্যাগাজিন ‘অঞ্জলি’ আরও একটি অনবদ্য সংযোজন ।
শুধু দুর্গাপুজো নয়, লক্ষ্মীপুজোও হবে । তারও প্রস্তুতি রয়েছে । আরও রয়েছে এ বছরের বিশেষ আকর্ষণ স্পোর্টস । এ ছাড়াও নানারকম সমাজসেবামূলক কাজেও এদের সহযোগিতা অনস্বীকার্য । বিভিন্ন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান পূজারীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বার্কমার হাই স্কুলে স্টল দিয়ে ইন্ডিয়ার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে । আনন্দ ভাগ করে নেওয়াই একমাত্র লক্ষ্য । নিজের মাটির গন্ধ থেকে দূরে বিদেশের মাটিতে প্রাণ ভরে কয়েকদিন শ্বাস নেওয়ার প্রতীক্ষায় রয়েছেন আটলান্টাবাসী ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy