হামলার পরে ঘটনাস্থলে ফরাসি সন্ত্রাসদমন পুলিশ। ছবি এএফপি।
এমনই কিছু একটা আঁচ করেছিল পুলিশ। শুক্রবার প্যারিসে ছুরি হামলা যে বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়, রবিবার তা স্পষ্ট করল তারা। পুলিশ জানাল, পাঁচ বছর আগে ফরাসি পত্রিকা ‘শার্লি এবদো’র দফতরে জঙ্গি হানার সঙ্গে জুড়ে আছে শুক্রবারের হামলার সূত্র।
শুক্রবার প্যারিসের বাস্তিল প্লাজ়ার কাছে মাংস কাটার ছুরি নিয়ে হামলা চালায় এক তরুণ। ওই ঘটনায় গুরুতর জখম হন দু’জন। আরও দু’জনের চোট লাগে। হামলাকারী পালালেও সে দিনই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত দু’দিন ধরে জেরায় সে অপরাধের কথা কবুল করেছে। জানা গিয়েছে, বছর আঠারোর ওই তরুণ আদতে পাকিস্তানের নাগরিক। তিন বছর আগে প্যারিসে এসেছিল সে। তার হামলার নিশানায় ছিল ‘শার্লি এবদো’ই।
২০১৫ সালে ইসলাম ধর্মগুরুর কার্টুন ছাপানোয় পত্রিকার দফতরে হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দা। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান পত্রিকার ১২ জন শিল্পী ও কর্মী। তার তিন দিনের মধ্যে ফের হামলা চালিয়ে আরও পাঁচ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পুলিশের পাল্টা গুলিতে মারা যায় তিন হামলাকারীও।
সেই শুরু। এর পর গত কয়েক বছরে জঙ্গি হামলায় ফ্রান্সে অন্তত আড়াইশো জন নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি ‘শার্লি এবদো’ মামলায় জঙ্গিদের সাহায্য করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয় কয়েক জন। এই বিচারকে সম্মান জানিয়ে ২০১৫ সালের বিতর্কিত ব্যঙ্গ চিত্রটি পুনরায় ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেয় পত্রিকাটি। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে পত্রিকার দফতরে হামলার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তানের ওই তরুণ। তবে পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারী জানত না যে, ২০১৫ সালের পরে পত্রিকা তার ঠিকানা বদলে ফেলেছে। কোনও গোপন জায়গা থেকে এখন কাজ চালায় পত্রিকাটি। আর তার পুরনো ঠিকানায় এখন অন্য একটি টিভি চ্যানেলের প্রধান দফতর।
শুক্রবার ওই চ্যানেলের দুই কর্মী দফতরের নীচে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ধূমপান করছিলেন। তখনই ছুরি নিয়ে হামলা চালায় ধৃত তরুণ। আক্রান্তদের অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তে নেমে ওই তরুণের রুমমেটকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরও কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
হামলার পরে থেকে কড়া নিরাপত্তায় মোড়া ফ্রান্সের রাজধানী। তার মধ্যেই আজ দেশ জুড়ে পালিত হয়েছে ইহুদি নববর্ষ ইয়োম কিপুর। ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইহুদিদের বাস ফ্রান্সেই। আজ প্যারিসে একটি সিনাগ্যগে নববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন বলেন, ‘‘চিন্তার কোনও কারণ নেই। ইহুদিদের নিরাপত্তায় অন্তত ৭ হাজার পুলিশ ও সেনাকর্মী নামানো হয়েছে।’’ অতীতে ইহুহিদের নিশানা করে বারবার হামলা চালিয়েছে ইসলামি জঙ্গিরা।