চিনা ভাষায় তাঁর নামের মানে হিম সুন্দরী। ভোগ-এর মডেল হুয়েই অ্যাবিং আক্ষরিক অর্থেই তাই।
জিনের অসুখ অ্যালবিনিজমে আক্রান্ত হুয়েই। তবে শারীরিক যাবতীয় অস্বাভাবিকত্ব নিয়েই তিনি আজ খ্যাতির শিখরে।
বয়স ১৬। তবে ১১ বছর বয়স থেকেই মডেলিংয়ের দুনিয়ায় রয়েছেন হুয়েই। তিনি মনে করেন, মডেলিংয়ের কাজের মধ্যে দিয়েই লক্ষ লক্ষ অ্যালবিনোকে তিনি অনুপ্রাণিত করতে পারেন। তাঁদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের জবাবও দিতে পারেন।
এই রোগে শরীর নিজের স্বাভাবিক রং হারায়। ত্বকের জরুরি উপাদান মেলানিনের অভাবে স্বাভাবিকত্ব হারায় ত্বক, চুল, চোখ। দৃষ্টিশক্তিতেও এর প্রভাব পড়ে।
এই রোগে আক্রান্ত হুয়েইয়ের দৃষ্টিশক্তিও মাত্র ১০ শতাংশ। বেশি আলো সহ্য করতে পারেন না তিনি। তবু সেজেগুজে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোয় তাঁর জুড়ি নেই।
শ্যুটিংয়ের জন্য বেশি আলো জরুরি। চোখ বাঁচাতে তাই হুয়েই বেশির ভাগ ছবিই তোলেন চোখ বন্ধ করে। হুয়েইয়ের কথায়, “চোখ না বুজলে ক্যামেরার আলোয় এমনিই চোখ চেপে বন্ধ করে ফেলি। তখন ছবি বাজে ওঠে।’’
মডেল হিসেবে অবশ্য ইতিমধ্যেই বেশ নাম করেছেন হুয়েই। ফ্যাশন দুনিয়ার প্রথম সারির পত্রিকা ভোগ-এর হয়ে মডেলিং করেছেন। ডিজাইনার মহলেও বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে তাঁর। কাজ করেছেন দুনিয়ার সেরা ডিজাইনার এবং ফোটোগ্রাফারদের সঙ্গে।
ডিজাইনারদের অনেকেরই মত, হুয়েইয়ের ত্বক-চুলের বিশেষত্বই তাঁকে মডেল হিসেবে চ্যালেঞ্জিং বানিয়েছে।
অথচ জন্মের পর হুয়েইকে অস্বীকার করেছিলেন তাঁর বাবা-মা। জীবনের প্রথম তিনটি বছর অনাথালয়ে কেটেছে হুয়েইয়ের।
নিজের জন্মদিন জানেন না হুয়েই। এক বছর আগে পর্যন্ত নিজের বয়স সম্পর্কেও কোনও ধারণা ছিল না তাঁর। হাতের এক্সরে করাতে গিয়ে চিকিৎসকরা তাঁর বয়স সম্পর্কে একটি ধারণা পান। গত বছর হুয়েই জানতে পারেন তাঁর বয়স ১৫-র আশেপাশে।
এক সাক্ষাৎকারে হুয়েই বলেছিলেন, ‘‘আমার জন্মের সময়ে চিনে এক সন্তান নীতি চলছিল। এক বার সন্তান হলে আর দ্বিতীয় সন্তানের জন্য সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়া যেত না। এই পরিস্থিতিতে এই রোগ নিয়ে জন্মেছিলাম আমি। বাবা-মা আমাকে দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কি ই বা মনে করতেন?’’
জন্মের পরই হুয়েইকে অনাথালয়ে ছেড়ে এসেছিলেন তাঁর বাবা-মা। হুয়েই নামকরণ করেন সেই অনাথালয়ের এক কর্মী। চিনে ‘হু’ শব্দের অর্থ বরফ। আর ‘ই’ মানে সুন্দর। হুয়েই মনে করেন, এর থেকে ভাল নাম তাঁর আর হতেই পারত না।
তিন বছর বয়সে তাঁকে দত্তক নেন নেদারল্যান্ডসের এক মহিলা। নতুন মা এবং বোনের সঙ্গে চিন থেকে নেদারল্যান্ডসে চলে আসেন হুয়েই।
ঘটনাচক্রেই মডেলিংয়ে আসেন হুয়েই। হংকংয়ের এক ডিজাইনারের সঙ্গে জানাশোনা ছিল তাঁর মায়ের। সেই ডিজাইনার ‘পারফেক্ট ইমপারফেকশন’ নামে একটি ফ্যাশন শোয়ের আয়োজন করেন। তথাকথিত কিছু শারীরিক অস্বাভাবিকত্ব সত্ত্বেও কী ভাবে ফ্যাশনকে ভালবাসা যায়, তা নিয়েই ফ্যাশন শো।
হুয়েই জানিয়েছেন, ওই ডিজাইনারের ছেলের ঠোঁটের সমস্যা ছিল। তিনি এমন পোশাক বানাতে চেয়েছিলেন, যাতে পোশাক ছেড়ে ঠোঁটের দিকে নজর না যায়। হুয়েইকে ওই বিশেষ ফ্যাশন শোয়ে যোগ দিতে বলেন তিনি। হুয়েই জানিয়েছেন, বছর চারেক আগের সেই অভিজ্ঞতার কথা জীবনে ভুলবেন না তিনি।
ফ্যাশন শোয়ে নজরে পড়েন হুয়েই। পর পর ডাক পেতে শুরু করেন ফ্যাশন ফটোশ্যুটের জন্য। বেশ কিছু মডেলিং এজেন্সিও যোগাযোগ করতে শুরু করে তাঁর সঙ্গে। তাঁর করা একটি ফটোশ্যুটের ছবি প্রকাশিত হয় ফ্যাশন পত্রিকা ভোগ-এ।
হুয়েই জানিয়েছেন, ‘ভোগ’ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না তাঁর। কেন তাতে ছবি বেরনোর জন্য সবাই এত উৎসুক, তা তখনও জানতেনই না তিনি। তবে ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করেন।
হুয়েই জানিয়েছেন, ফ্যাশন দুনিয়ায় দেখতে আলাদা হওয়া যে আসলে আশীর্বাদ তা এখন বুঝেছেন তিনি।
বিরল জিন রোগ অ্যালবিনিজমে আক্রান্ত হন প্রতি ১৭ হাজারে একজন। হুয়েই জানিয়েছেন, এই রোগে আক্রান্তদের রীতিমতো ঠাট্টা করা হয়। অনেক সময় ভূত, ভিন্গ্রহী জাতীয় মন্তব্যও করা হয়। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও যে শীর্ষে যাওয়া যায় নিজের মডেলিংয়ের মধ্যে দিয়ে তাঁর সেই বার্তা পৌঁছে দিতে চান তিনি।