পড়ে রয়েছে বিমানে ধ্বংসাবশেষ। ছবি: এএফপি।
সাত সকালে তেহরান বিমানবন্দরের কাছে ভেঙে পড়ল একটি ইউক্রেনীয় বিমান। বিমানকর্মী-সহ মোট ১৭৬ জন যাত্রী নিয়ে তেহরানের ইমাম খোমেইনি বিমানবন্দর থেকে রওনা দিয়েছিল বিমানটি। আকাশে ওড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেটি ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনায় যাত্রীদের সকলেরই মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সে দেশের সরকারি টিভি চ্যানেল।
বিমানবন্দর থেকে রওনা দেওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটল কীভাবে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। তবে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ইরানের সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ। গত সাড়ে তিন বছর ধরে যাত্রী পরিবহণের জন্য বিমানটি ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে ফ্লাইট ট্র্যাকিং সার্ভিস ‘ফ্লাইট রেডার-২৪’।
তেহরানের ইমাম খোমেইনি বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার স্থানীয় সময় ভোর সওয়া ৫টা নাগাদ সেখান থেকে কিয়েভের বোরিস্পিল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা ছিল ইউক্রেনিয়ান এয়ারলাইনের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বোয়িং ৭৫২ বিমানটির।
বিমান দুর্ঘটনার এই ভিডিয়োই সামনে এসেছে।
কিন্তু এ দিন প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে, সকাল ৬টা বেজে ১২ মিনিটে বিমানটি ছাড়ে। তার কিছু ক্ষণ পরই দক্ষিণ-পশ্চিমের পারান্দের কাছে বিমানটি ভেঙে পড়ে। ইরানের আইএসএনএ সংবাদ সংস্থার তরফে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে আগুন লাগা অবস্থায় বিমানটিকে মাটিতে পড়তে দেখা যায়। তার পর প্রচণ্ড জোরে বিস্ফোরণও ঘটে।
দেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। ছবি: এএফপি।
বিষয়টি জানতে পেরে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে তেহরানের আপদকালীন পরিষেবা বিভাগের কর্মীরা পৌঁছন। উদ্ধারকর্মীদের একটি দলও ঘটনাস্থলে হাজির হয় বলে জানান সে দেশের অসামরিক বিমান পরিবহণ বিভাগের মুখপাত্র রেজা কাফরাজাদেও। কিন্তু তত ক্ষণে সব শেষ।
পড়ে রয়েছে বিমানে ধ্বংসাবশেষ।
এ দিনই ইরাকে মার্কিন বাহিনীকে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেচনা যখন তুঙ্গে, ঠিক সেই সময় এই ঘটনা ঘটল।
ইউক্রেনিয়ান এয়ারলাইনের যে বিমানটি এ দিন দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছে, সেটি দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট, মাঝারি দূরত্বের বোয়িং ৭৩৭-৮০০-র মধ্যে পড়ে। ১৯৯০ সালের শেষ দিকে এই বিমান চালু হয়। এই মুহূর্তে বিশ্বের বহু দেশের বিমান সংস্থাই এই বিমান ব্যবহার করে। তবে এই ধরনের বিমান দুর্ঘটনাপ্রবণ বলেও মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। ২০১৬-র মার্চে দুবাই থেকে রাশিয়ার রোস্তভ অন ডন বিমান বন্দরে নামার সময় ফ্লাইদুবাই ৭৩৭-৮০০ বিমানটি ভেঙে পড়লে ৬২ জন প্রাণ হারান। ২০১০-এর মে মাসে দুবাই থেকে মেঙ্গালুরুতে নামার সময় ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের আর একটি ৭৩০-৮০০ বিমান। সে বার ১৫০ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়।
তবে গত কয়েক বছরে একাধিক বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে ইরান। ২০১৯-এর শুরুতেই খারাপ আবহাওয়ার জেরে সেনাবাহিনীর বোয়িং ৭০৭ বিমান ভেঙে পড়ে সেখানে। তাতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে তেহরান থেকে ইয়াসুজ যাওয়ার পথে একটি যাত্রীবাহী বিমান ভেঙে পড়ে। সে বার ৬৫ জন প্রাণ হারান। তার আগে, ২০১৪-য় তেহরানের মেহরাবাদ থেকে ছাড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়ে একটি বিমান, তাতে ৩৯জন মারা যান।