জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ছবি: রয়টর্স।
মুক্ত উইকিলিক্স প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। আদালতের রায় ঘোষণার পর গত ১৪ বছরে এই প্রথম ‘মুক্ত’ অবস্থায় হেঁটে বেরিয়ে এলেন। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর জেল থেকে মুক্তি পেলেন অ্যাসাঞ্জ।
আমেরিকার নেতৃত্বে ইরাক এবং আফগানিস্তানে হওয়া সংঘাত সংক্রান্ত পাঁচ লক্ষ গোপন সামরিক ফাইল ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছিল অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে। উইকিলিক্সের তরফে প্রকাশিত ওই গোপন নথিতে থাকা একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, ২০০৭ সালে ইরাকে আমেরিকার হেলিকপ্টার থেকে সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হচ্ছে। নিহত সাধারণ মানুষদের মধ্যে ছিলেন সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকও। এই কারণে চরবৃত্তির অভিযোগে আমেরিকাতে অ্যাসাঞ্জকে অপরাধীও ঘোষণা করা হয়।
এখানেই শেষ নয়, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ওঠে যৌন নিগ্রহের অভিযোগও। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে লন্ডনের জেলে বন্দি ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। সুইডেনে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠায় গ্রেফতারি এড়াতে দীর্ঘ সাত বছর লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ বছর নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়ার বাইরে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ।
তবে আমেরিকার একটি আদালতে মঙ্গলবার ঘটে এক ‘বিরল’ ঘটনা। তিন ঘণ্টা টানা শুনানি চলে। সেখানেই নিজের দোষ স্বীকার করে নেন অ্যাসাঞ্জ। তবে তিনি এ-ও মনে করিয়ে দেন, সংবিধান অনুযায়ী সকলেরই বাক্স্বাধীনতা রয়েছে। দোষ স্বীকার করার পর তাঁকে মুক্তি দেন বিচারক। মূলত, তাঁকে নিয়ে আমেরিকা এবং ব্রিটেনের চুক্তি হয়। তার পরেই যুক্তরাজ্যের বেলমার্শ সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
২০২০ সাল থেকে লন্ডনের একটি আদালতে আমেরিকায় অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। ২০২১ সালে এক ব্রিটিশ বিচারক জানান, আমেরিকায় অ্যাসাঞ্জকে পাঠানো ঠিক হবে না। যুক্তি হিসাবে বলা হয়, অ্যাসাঞ্জের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক নয়। তাই তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। যদিও ওই বছরেরই শেষ দিকে আমেরিকার আবেদনে সন্তুষ্ট হয় ব্রিটিশ আদালত। আমেরিকা জানায়, বন্দি করলেও অ্যাসাঞ্জের মানসিক এবং শারীরিক যত্ন নেওয়া হবে। ২০২২ সালে আমেরিকায় প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে অ্যাসাঞ্জকে আবেদন জানানোর অনুমতি দেয়নি ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট।
২০২৩ সালে অ্যাসাঞ্জের আমেরিকায় প্রত্যর্পণের বিষয়ে সিলমোহর দেয় লন্ডন হাই কোর্ট। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকায় প্রত্যর্পণ আটকাতে শেষ চেষ্টা করেন অ্যাসাঞ্জ। মার্চে অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণ স্থগিত রেখে ব্রিটিশ আদালত জানায়, উইকিলিক্স প্রতিষ্ঠাতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না, এই বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে হবে আমেরিকাকে। চলতি বছরের মে মাসে ব্রিটিশ আদালতের দুই বিচারক জানান, প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আবেদন জানাতে পারবেন অ্যাসাঞ্জ। আর জুনে আমেরিকার বিচার বিভাগ এবং উইকিলিক্স জানায়, তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়ে যাওয়ায় জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন অ্যাসাঞ্জ।