Julian Assange

আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতা, মুক্তি পেলেন অ্যাসাঞ্জ

৫২ বছরের অ্যাসাঞ্জের দুই সন্তান এই প্রথম জেলের গরাদের বাইরে দেখবে তাদের বাবাকে। কারণ আমেরিকান সরকারের সঙ্গে এক চুক্তির পরে আজ বেলমার্শ কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন অ্যাসাঞ্জ।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪ ০৮:১০
Share:

(বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়)‘উইকিলিকস’ প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ছবি: রয়টার্স।

তাঁকে দেখে কারও কারও মনে পড়ত স্টিভেন স্পিলবার্গের ‘দ্য টার্মিনাল’ ছবির ভিক্টরের কথা। টম হ্যাঙ্কস অভিনীত সেই চরিত্র দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছিল এক বিমানবন্দরে। আর তিনি, ‘উইকিলিকস’ প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ নিজের প্রত্যর্পণ এড়াতে বাসা বেঁধেছিলেন লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে। প্রায় সাত বছর সেই দূতাবাসই ছিল তাঁর ঘরবাড়ি। এক সময়ে দূতাবাস থেকে বার করে তাঁকে পাঠানো হয় জেলে। পাঁচ বছর অ্যাসাঞ্জ ছিলেন লন্ডনের বেলমার্শ কারাগারে। বিয়ে সারেন সেই জেলেই।

Advertisement

৫২ বছরের অ্যাসাঞ্জের দুই সন্তান এই প্রথম জেলের গরাদের বাইরে দেখবে তাদের বাবাকে। কারণ আমেরিকান সরকারের সঙ্গে এক চুক্তির পরে আজ বেলমার্শ কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। এই চুক্তি সম্পর্কে সবিস্তার এখনও জানা যায়নি। তবে আদালতের নথি থেকে জানা গিয়েছে, ‘উইকিলিকস’ ওয়েবসাইটে আমেরিকান সরকারের গোপন নথি ফাঁসের দায় স্বীকার করে নেবেন অ্যাসাঞ্জ। শোনা যাচ্ছে, ৬২ মাসের কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর। কিন্তু তা হলেও আমেরিকার হেফাজতে আর অ্যাসাঞ্জকে থাকতে হবে না। কারণ, যেহেতু পাঁচ বছর তিনি ব্রিটেনের জেলে ছিলেন, তাই তাঁর সাজাও খাটা হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।

ছাড়া পেয়েই লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে চার্টার্ড বিমানে ব্যাঙ্কক যান অ্যাসাঞ্জ। সেখান থেকে রওনা হন প্রশান্ত মহাসাগরের আমেরিকান দ্বীপপুঞ্জ নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডসের অন্তর্গত সাইপানের উদ্দেশে। সাইপানেই কাল আমেরিকান ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে তাঁর মামলার শুনানি হবে। চিঠিতে প্রকাশ, আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে যেতে রাজি হননি অ্যাসাঞ্জ। ধরে নেওয়া হচ্ছে, আমেরিকান আদালতের রায়ের পরেই তিনি ফিরবেন নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়ায়— ১৪ বছর ধরে চলা একটা ঝড়ের পরে। সেই ঝড় অ্যাসাঞ্জেরই তৈরি। আমেরিকার নেতৃত্বে ইরাক ও আফগানিস্তানে হওয়া যুদ্ধ সংক্রান্ত কয়েক লক্ষ গোপন ফাইল ২০১০ সালে নিজের ‘হুইসলব্লোয়িং’ ওয়েবসাইট উইকিলিকসে ফাঁস করে দেন অ্যাসাঞ্জ। তার মধ্যে থাকা একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, সামরিক হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হচ্ছে সাধারণ মানুষের উপরে। অভিযোগ ওঠে, ২০০৭ সালে ইরাকে আমেরিকান সেনার ওই হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে দুই সাংবাদিকও মারা গিয়েছিলেন।

Advertisement

শোরগোল পড়ে যায় বিশ্বে। ইতিমধ্যে সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে দু’জন মহিলাকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। সুইডেনে প্রত্যর্পণ করা হলেই তাঁকে আমেরিকায় পাঠানো হবে, এই আশঙ্কায় অ্যাসাঞ্জ রাজনৈতিক আশ্রয় নেন লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে। সেখানেই ছিলেন ২০১৯ পর্যন্ত, যত দিন না ইকুয়েডর তাঁকে এই আশ্রয় দিতে অস্বীকার করে। ইকুয়েডর মুখ ফেরাতেই ব্রিটিশ পুলিশ দূতাবাসে ঢুকে গ্রেফতার করে অ্যাসাঞ্জকে। তত দিনে বহু মানুষের চোখে তিনি বাক্‌স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মুখ। অনেকের চোখে একটি দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা খলনায়ক। পরে অবশ্য সুইডেন যৌন নিগ্রহের অভিযোগ প্রত্যাহার করেছে।

অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলার অনেকক্ষণ বিশ্বাসই হয়নি স্বামীর কারামুক্তির খবর। জানালেন, গত ২৪ ঘণ্টাতেও নিশ্চিন্ত ছিলেন না। এখন আবেগে ভাসছেন। শুনানির আগে আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে মুখ খুলতে চাননি স্টেলা। তবে বলেছেন, বিচারক তাঁর নির্দেশে সই করা মাত্রই অ্যাসাঞ্জ হয়ে যাবেন ‘এক মুক্ত মানুষ’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement