Hashmat Ghani

Hashmat Ghani: বাহন বুলেটপ্রুফ লিমুজিন, ক্ষমতা বিস্তারে তালিবানের বড় ভরসা কোটিপতি ব্যবসায়ী

আফগানিস্তানের শিক্ষিত এবং মার্জিত সমাজের উঁচু স্তরের প্রতিনিধি হাসমত। তাঁর শিক্ষাদীক্ষার বেশির ভাগই বিদেশে। পাঁচটি ভাষায় দখল রয়েছে তাঁর।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২১ ১৫:৪৫
Share:
০১ ১৬

অতি বড় ক্ষমতাধরেরও ভরসার দরকার হয়। আফগানিস্তানে দিন কয়েক আগে তেমনই এক ভরসার ঠিকানা পেয়েছে তালিবান।

০২ ১৬

সেই ভরসার নাম হাসমত গনি। আফগানিস্তানের কোটিপতি ব্যবসায়ী হাসমত। তবে তাঁর আরও একটি পরিচয় আছে। হাসমত আসলে আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির ভাই।

Advertisement
০৩ ১৬

আশরফ ২০১৪ সালে আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট হন। ওই একই বছরে হাসমতও প্রেসিডেন্ট পদের দাবিদার ছিলেন। শিক্ষিত, সুবক্তা, প্রভাবশালী এবং আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষমতাবান হাসমত যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ্য, তা নিয়ে দ্বিমত ছিল না কারও। কিন্তু লড়াইয়ের আগেই ময়দান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল হাসমতকে।

০৪ ১৬

দেশের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য দুই ভাইয়ের মুখোমুখি লড়াই খুব কমই দেখা গিয়েছে। গনি ভাইদের লড়াই নিয়ে তাই উৎসাহ তৈরি হয়েছিল সে সময়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর তালিকা থেকে হাসমতের নাম বাদ দেওয়া হয়।

০৫ ১৬

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা সেই সময় বলেছিলেন, এর নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। সে বার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর তালিকায় তাঁরাই কল্কে পেয়েছিলেন যাঁরা হামিদের কাছের লোক ছিলেন। হাসমত কোনও দিনই সেই সারিতে ছিলেন না।

০৬ ১৬

বরাবরই দেশের অর্থনৈতিক দুর্নীতি নিয়ে সরব ছিলেন হাসমত। তিনি বলতেন, দেশের উন্নয়ন নিয়ে আফগান সরকার উদাসীন। এমনকি বিদেশ থেকে আসা কোটি কোটি ডলার পেয়েও তা কাজে লাগায় না সরকার। পরিকাঠামোর উন্নয়নে কোনও ইচ্ছা তো নেই-ই বরং ওই অর্থ সরকারই আত্মসাৎ করে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ সব কিছু নিয়েই হাসমত অভিযোগ করেছেন বার বার। প্রকাশ্যেই অসন্তোষ জানিয়েছেন।

০৭ ১৬

আফগানদের বৃহত্তম উপজাতি কোচির পরিষদীয় প্রধান হাসমত। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর কথার গুরুত্ব এই অংশের মানুষের কাছে ব্যাপক। এই কোচিরা সংখ্যায় নেহাৎ কম নয়। ২০০৪ সালে যখন আফগানিস্তানেরর মোট জনসংখ্যা ২.৪৭ কোটি, তখন কোচিরা সংখ্যায় ২৪ লক্ষ। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। দেশের একটি বড় অংশের মানুষের কাছে সরকারকে অপদস্থ করে হাসমতের সেই সব মন্তব্য যে হামিদ ভাল চোখে দেখেননি, তারই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ে।

০৮ ১৬

হাসমত নিজেও বলেছিলেন তাঁর নাম বাদ যাওয়ার নেপথ্যে আফগান ‘রাজপ্রাসাদের’ ভূমিকা থাকতে পারে। তবে এ নিয়ে আর বেশি কথা বাড়াননি। গত কয়েক বছরে সে ভাবে খবরেও ছিলেন না সদ্য প্রাক্তন আফগান প্রেসিডেন্টের এই শিল্পপতি ভাই।

০৯ ১৬

হাসমত ঘোরাফেরা করেন বুলেটপ্রুফ লিমুজিন গাড়িতে। থাকেন সাড়ে ২৩ হাজার বর্গফুটের প্রাসাদে। প্রায় সাত বছর পর একটি টুইটের সুবাদেই খবরে এলেন হাসমত। টুইটটি করেছিলেন তিনিই। ২১ অগস্ট বিকেল সোয়া ৫টা নাগাদ।

১০ ১৬

তার ঠিক ৬ দিন আগেই তালিবানের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে দেশ ছেড়েছেন দাদা আশরফ। হাসমত অবশ্য টুইটারে লেখেন, ‘আফগানিস্তানকে কাঙ্ক্ষিত নিরাপত্তা দিতে পারে তালিবানই।’

১১ ১৬

নেটমাধ্যমে এর পাশাপাশি ছড়িয়েছিল একটি ভিডিয়োও। তাতে দেখা যায় তালিবান শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন হাসমত। পাশে দাঁড়ানো তালিব নেতা জড়িয়ে ধরেছেন হাসমতকে। তাঁর মাথা চুম্বন করতেও দেখা যায় ওই তালিবান নেতাকে। এর পর সশস্ত্র তালিব যোদ্ধারা স্লোগান দিতে শুরু করেন। মুখে খুশির হাসি দেখা যায় হাসমতেরও।

১২ ১৬

২১ অগস্ট ভোরে ভিডিয়োটি পোস্ট করেছিলেন পাকিস্তানের এক সাংবাদিক। হাসমতের টুইট সামনে আসে তার ঘণ্টা কয়েক পর। তালিবানি নিরাপত্তার উপর আস্থা দেখানোর পাশাপাশি হাসমত বুঝিয়ে দেন, দেশবাসীর তালিবদের উপরই আস্থা রাখা উচিত। একইসঙ্গে নতুন শাসনে তালিবদের সমর্থনে শিক্ষিত সমাজকে এগিয়ে আসার বার্তাও দেন হাসমত।

১৩ ১৬

আফগানিস্তানের শিক্ষিত, মার্জিত সমাজের উপরতলার শক্তপোক্ত প্রতিনিধি হাসমত। তাঁর শিক্ষাদীক্ষা বেশির ভাগই বিদেশে। ফ্রান্স, আমেরিকা, আরব আমিরশাহি থেকে পড়াশোনা করেছেন। পাঁচটি ভাষায় দখল রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিপণন বিষয়ে এমবিএ ডিগ্রিও আছে তাঁর।

১৪ ১৬

আবার রাজনৈতিক কৌশলেও কিছু কম যান না। হাসমত সম্পর্কে এক বার তাঁর মেয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমার বাবা একইসঙ্গে কারজাই এবং তাঁর শত্রুদের এক ঘরে এনে দাঁড় করাতে পারেন। বাইরে হয়তো তাঁরা মুখোমুখি হলেই একে অপরকে কেটে ফেলবেন। অথচ আমার বাবার ডাকে, আমার পিতামহীর শেষকৃত্যে তাঁরা পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিলেন। বাবার সেই ক্ষমতা আছে।’’

১৫ ১৬

দাদা আশরফ যখন তালিবদের ভয়ে পালিয়েছেন তখন তালিবদের সঙ্গেই হাসমতের সখ্য নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন একটি মহল। তাঁরা হাসমতের নিন্দাও করেছেন। যদিও অন্য একটি মহল মনে করছে একদা বঞ্চিত হাসমতকে কাছে টেনে দেশের শিক্ষিত সমাজের ভরসা পেতে চাইছে তালিবান। হাসমতের কথা এবং কাজ দুই-ই সেই উদ্দেশ্য সফল করতে পারে।

১৬ ১৬

হাসমতে তাই আপাতত ভরসা রাখছে তালিবান। তালিবদের হয়ে নেটমাধ্যমে একের পর এক টুইট করছেন হাসমতও। যদিও শেষ পর্যন্ত কে কার ভরসা হয়ে ওঠেন সে দিকে সতর্ক নজর রাখছে আন্তর্জাতিক মহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement