ছবি এএফপি।
এই প্রশ্ন ওঠারই ছিল। উঠলও। গত কাল একটি মার্কিন সংবাদ সংস্থার সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়— ‘‘কেন বারবার পুলিশি অত্যাচারে মরতে হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গদের?’’ অপ্রত্যাশিত উত্তর মেলেনি। বরং স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে প্রেসিডেন্ট জানালেন— শ্বেতাঙ্গদের আরও বেশি মরতে হয়। এমন প্রশ্ন করাই ভয়ানক!
গত ২৫ মে মিনিয়াপোলিসের রাস্তায় পুলিশি অত্যাচারে নৃশংস ভাবে মারা যান কৃষ্ণাঙ্গ-মার্কিন জর্জ ফ্লয়েড। তোলপাড় পড়ে যায় গোটা দেশে। আমেরিকায় বাড়তে থাকা করোনা-সংক্রমণ উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমেছিলেন মানুষ। শুরু হয় কৃষ্ণাঙ্গদের সমানাধিকারের দাবিতে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন। এ সময়ে প্রেসিডেন্টকে ফ্লয়েড-হত্যা নিয়ে সে ভাবে কিছু বলতে শোনা যায়নি। বরং ‘শ্বেতাঙ্গই সেরা’ ভিডিয়ো টুইট করেছেন তিনি (পরে মুছেও দেন)। শ্বেতাঙ্গ-অধিকার ও তার সঙ্গে জুড়ে থাকা আমেরিকার অন্ধকার ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার দাবি জানিয়েছেন। সর্বশেষ মাউন্ট রাশমোরে স্বাধীনতা দিবস পালন, যা কিনা ঔপনিবেশকতা ও আমেরিকার আদি বাসিন্দাদের গণহত্যার প্রতীক। স্বাভাবিক ভাবেই গত কালের সাক্ষাৎকারে তাঁর গলায় শোনা যায় একই সুর। দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার হাতে এখনও কেন কালো মানুষদের মরতে হচ্ছে, এ প্রশ্নের মুখে বারবার একই কথা বলতে থাকেন ট্রাম্প— ‘‘শ্বেতাঙ্গরাও মরছেন, শ্বেতাঙ্গরাও মরছেন। কী ভয়ানক প্রশ্ন! শ্বেতাঙ্গরাও মরছেন। বলা ভাল, শ্বেতাঙ্গরা আরও বেশি করে মরছেন, আরও বেশি করে মরছেন!’’
একটি প্রথম সারির মার্কিন দৈনিকের সদ্য সমাপ্ত (গত সোমবার) সমীক্ষা অবশ্য জানাচ্ছে— আমেরিকার জনসংখ্যার ১৩ শতাংশেরও কম কৃষ্ণাঙ্গ। কিন্তু পুলিশের হাতে তাঁদের মৃত্যুর ঘটনার হার শ্বেতাঙ্গদের দ্বিগুণ।
মার্কিন নাগরিকদের একাংশেরও মত, আন্দোলন করে শুধু-শুধুই পুলিশ দফতরের সম্মানহানি করা হচ্ছে। ফ্লয়েড-হত্যার পরে দেশ যখন আন্দোলনে উত্তাল, হোয়াইট হাউসের সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্পকেও একাধিক বার বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘পুলিশ দারুণ কাজ করছে।’’ তিনি এ-ও বলেছেন, ‘‘এক-দু’জন খারাপ পুলিশকর্মী থাকতেই পারে, সে যে কোনও পেশায় থাকে।’’
‘দ্য আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন’-এর কর্তা জেফরি রবিনসন আজ বলেন, ‘‘ট্রাম্পের বর্ণবিদ্বেষ এতটাই স্পষ্ট, যে উনি কখনওই স্বীকার করবেন না, দেশে কৃষ্ণাঙ্গদের উপরে পুলিশি-অত্যাচার চলছে।’’