ওড়াকান্দিতে বক্তৃতা করছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলায় ভোট চলাকালীন পড়শি দেশে গিয়ে মতুয়া আবেগ উস্কে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী ২২ এপ্রিল মতুয়া প্রভাবিত বেশ কয়েকটি আসনে নির্বাচন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বনগাঁ এবং রানাঘাট লোকসভার অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্রগুলি। তার আগে ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়ে শনিবার গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়ি পৌঁছন মোদী। সেখানে মতুয়াদের তীর্থপীঠ শ্রীধাম হরিচাঁদ মন্দিরে পুজো দিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। মোদী বলেন, ‘‘ওড়াকান্দির এই পবিত্র ভূমি ভারত ও বাংলাদেশের আত্মিক সম্পর্কের তীর্থক্ষেত্র।’’
বাংলায় মতুয়া ভোট নিজেদের পক্ষে টানতেই মোদীর এই মতুয়া-প্রীতি বলে ইতিমধ্যেই কটাক্ষ করতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। কিন্তু মোদীর দাবি, ওড়াকান্দিতে গিয়ে তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে একাত্ম বোধ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভারতে থাকা মতুয়া সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মতুয়া ভাইবোনেরা ওড়াকান্দিতে এসে যেমনটা অনুভব করেন, আমিও তেমনই অনুভব করছি। অনেক বছর ধরে এই পবিত্র দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০১৫ সালে যখন বাংলাদেশ এসেছিলাম, তখনই এখানে আসতে চেয়েছিলাম। আজ সেই ইচ্ছা পূর্ণ হল।’’
পশ্চিমবঙ্গে ৮ দফা নির্বাচনে মতুয়া ভোট একটা গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক। রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের ৮৪টিতে মতুয়া ভোটারের সংখ্যা ১৭ লক্ষের বেশি। তাই বাংলায় ভোটগ্রহণ চলাকালীন সুকৌশলে ঠাকুর পরিবারের সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে মোদী আসলে বিজেপি-র পক্ষে ভোট টানার চেষ্টা করছেন বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ঠাকুরনগরে বড় মা-র সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ নিয়েও এমনই তত্ত্ব উঠে এসেছিল। যদিও ওরাকান্দিতে মোদী বলেন, ‘‘বড়মার স্নেহ, মায়ের মতো আশীর্বাদ, আমার জীবনে একটা অমূল্য সময় ছিল।’’
২০১৯-এ ঠাকুরনগরে বড় মা-র সঙ্গে সাক্ষাৎ মোদীর। —ফাইল চিত্র।
তবে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে বিজেপি বরাবরই মতুয়া ভোটকে কাজে লাগিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের একাংশের। তাঁদের অভিযোগ, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের সময়ও বাংলায় প্রচারে এসে মতুয়া আবেগকে কাজে লাগিয়েছিলেন মোদী। দিল্লিতে বিজেপি-র সরকার প্রতিষ্ঠা হলে, মতুয়াদের ভারতের নাগরিকত্ব পেতে আর অসুবিধা থাকবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের সময়ও। বিরোধীদের দাবি, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টির ফয়সলা হবে বলে সে বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। তাতে ঢালাও ভোটও মেলে। গেরুয়া শিবিরের হয়ে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচিত হন শান্তনু। কিন্তু দ্বিতীয় বার মোদী সরকার দিল্লিতে ক্ষমতায় আসার পরও, মতুয়াদের নাগরিকত্বের বিষয়টি এখনও অথৈ জলে।
সেই নিয়ে কয়েক মাস আগে শান্তনুর সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের মন কষাকষির কথাও সামনে আসে। কিন্তু অমিত শাহের হস্তক্ষেপে সে ক্ষোভ স্তিমিত হয়। তার পর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলায় ভোটের প্রচারে এসে শাহ নিজেই জানিয়েছিলেন, কোভিড টিকাকরণের পর্ব শেষ হলেই, মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু হবে। তার পরই বাংলাদেশে মতুয়া-মঞ্চে মোদীর পাশে দেখা গেল শান্তনুকে। তবে ঠাকুরবাড়ির বধূ তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের সাফ যুক্তি, মিথ্যা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বিজেপি। রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড থাকার পরেও আলাদা করে নাগরিকত্ব কেন নিতে হবে, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।