ভ্লাদিমির পুতিন। —ফাইল ছবি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলপ্রকাশ না হলেও একাধিক সমীক্ষক সংস্থার দাবি, টানা ছ’বারের জন্য মস্কোর মসনদে বসতে চলেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। এই আবহেই আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়াকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখছেন ৭১ বছর বয়সি এই রুশ রাষ্ট্রপ্রধান। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি রাষ্ট্রজোট ‘নেটো’র সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাতের কোনও সম্ভাবনা রয়েছে কি না, সোমবার এই প্রশ্নের উত্তরে পুতিন জানান, আধুনিক বিশ্বে সবই সম্ভব।
এই প্রসঙ্গেই পুতিন রুশ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এটা সকলের কাছেই স্পষ্ট যে, তেমন হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে এক ধাপ দূরে থাকা হবে। আমি মনে করি খুব কম মানুষই তেমনটা চাইবেন।” ইউক্রেনে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্রিটিশ এবং ফরাসি সেনারাও রয়েছেন বলে দাবি করেছেন পুতিন। এ-ও দাবি করেছেন, নেটোর অধিকাংশ সেনাই রুশ সেনার ‘প্রতিরোধে’র সামনে মারা যাচ্ছেন। প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন পুতিন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাশিয়া কারিগরি এবং কৌশলগত দিক থেকে পরমাণু যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’’
রাশিয়ার অগ্রগণ্য একটি সমীক্ষক সংস্থার দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৮৭.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হতে চলেছেন পুতিন। নিকটতম বাম প্রতিদন্দ্বী পেয়েছেন মাত্র ৪ শতাংশ ভোট।পুতিনের জয় নিয়ে তাঁর অতি বড় বিরোধীরও কোনও সংশয় না থাকলেও, এত বড় ব্যবধানে জয় অনেককেই অবাক করেছে। সমীক্ষার ফল বাস্তবে মিলে গেলে সোভিয়েট-পরবর্তী রাশিয়ায় প্রথম এত বিপুল ব্যবধানে জয়ী হবেন কোনও রাষ্ট্রপ্রধান। জিতে প্রেসিডেন্ট পদে মেয়াদ পূরণ করতে পারলে, রাশিয়ার ২০০ বছরের ইতিহাসে দীর্ঘমেয়াদি শাসক হিসাবেও পয়লা নম্বরে থাকবেন পুতিন। ভাঙবেন জোসেফ স্ট্যালিন এবং লিওনিদ ব্রেজনেভের টানা ২৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার নজির। নিজের জয়কে বৈধতা দিতে পুতিন সোমবার এই বার্তাই দেন যে, পশ্চিমি দুনিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে এবং ইউক্রেনে সেনা পাঠিয়ে তিনি কোনও ভুল করেননি।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ায় তিন দিন ধরে চলা ভোটগ্রহণ রবিবারই শেষ হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ভোটে পুতিন সাড়ে ৭৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলেও সেই জোর করে ব্যালট বাক্সে জাল ভোট ভর্তি করা, জালিয়াতি এবং ভোটে বাধাদানের অভিযোগ উঠেছিল পুতিন-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ বার পুতিন-বিরোধী জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ বরিস নাদেজ়দিনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আগেই। অ্যালেক্সেই নাভালনির ‘রহস্যজনক’ মৃত্যুর পরে সেই অর্থে পুতিনের বড় কোনও প্রতিপক্ষও ছিলেন না এ বারের নির্বাচনে। কার্যত প্রতিদ্বন্দ্বীহীন নির্বাচনে জয় পেতে চলেছেন পুতিন।