ছবি: পিটিআই।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শোধরাতে বারবার বার্তা দিয়েছেন তিনি। আরও এক বার সেই পথে হাঁটলেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বললেন তিনি। হোয়াইট হাউসের তরফে দু’তরফের এই কথাবার্তাকে ‘সম্মানজনক’ ও ‘সরাসরি’ বলা হলেও চিনা সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া অবশ্য জানিয়েছে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে আমেরিকার হস্তক্ষেপ নিয়ে বাইডেনকে ফের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন শি। চিনা প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘‘আগুন নিয়ে খেললে তাতে পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’’
গত কাল আমেরিকান সময় গভীর রাতে আলোচনা শুরু হয় দুই রাষ্ট্রপ্রধানের। চিনে তখন ভোর হয়ে গিয়েছে। হোয়াইট হাউসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কালকের ভিডিয়ো বৈঠক চলেছে সাড়ে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। বাইডেন গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পরে শি-র সঙ্গে তাঁর দু’বার ফোনে কথা হয়েছিল। কিন্তু করোনা অতিমারির কারণে শি দেশ ছেড়ে অন্য কোনও দেশে যেতে রাজি না হওয়ায় ফের ভিডিয়ো বৈঠকের মাধ্যমেই তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট।
ওই বৈঠকে দু’পক্ষই সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানাচ্ছে হোয়াইট হাউসের সূত্র। তবে গোল বেধেছে বাইডেন তাইওয়ান ও উইঘুরদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ তোলায়। হোয়াইট হাউস বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাইওয়ানে চিনা আগ্রাসন নীতির তীব্র বিরোধিতা করেছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। সেই সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম চিনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের উপরে হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়েও সরব হয়েছে আমেরিকা। শি-র হুঁশিয়ারি নিয়ে অবশ্য কোনও কথা বলেননি হোয়াইট হাউসের ওই মুখপাত্র। যদিও শিনহুয়া তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, শি বলেছেন, ‘‘আমেরিকার কেউ কেউ তাইওয়ানকে ব্যবহার করে চিনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। কিন্তু
এটা খুবই ভয়ঙ্কর, কারণ আগুন নিয়ে খেলতে গেলে অনেক সময় পুড়ে যেতে হয়।’’
তবে শি বৈঠকে বাইডেনকে ‘আমার পুরনো বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছেন। এ-ও জানিয়েছেন, বিশ্বের দুই অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ হিসাবে তাঁদের দায়িত্ব অনেক বেশি। শি বলেছেন, ‘‘আমরা দু’দেশই একসঙ্গে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনৈতিক দেশ ও নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য হওয়ায় আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ও সহযোগিতা আরও বাড়াতে হবে।’’ জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা অতিমারির মোকাবিলায় দু’দেশকে আরও অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন বাইডেনও। দু’দেশের প্রতিযোগিতা যেন কখনও দ্বন্দ্বে না পরিণত হয়, সে কথাও শি-র কাছে স্পষ্ট করেছেন বাইডেন। বস্তুত ট্রাম্প আমলে চলা বাণিজ্য যুদ্ধের ছায়া থেকে বেরিয়েও আসার চষ্টা করেছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। চিনের সঙ্গে পরিকাঠামো সংক্রান্ত ১.২ লক্ষ কোটি ডলার চুক্তির কথাও জানিয়ে রেখেছেন তিনি।