ফাইল চিত্র।
তালিবান নেতৃত্ব রাজধানী কাবুল দখলের পর পরই ছবিগুলো ভাইরাল হয়েছিল। আমেরিকার সেনাবাহিনীর ফেলে যাওয়া বিপুল অস্ত্র ও যানবাহনের ভান্ডার চলে গিয়েছে তালিবান যোদ্ধাদের হাতে। ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে সাঁজোয়া গাড়ির উপরে চড়ে উল্লাস করছেন তাঁরা। হাতে আমেরিকার সেনার ব্যবহার করা রাইফেল। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই অস্বস্তিতে আমেরিকান প্রতিরক্ষা দফতর। এ বার তালিবান শাসিত আফগানিস্তানকে সব ধরনের অস্ত্র বেচা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল জো বাইডেন প্রশাসন। আশরফ গনির সরকারের পতনের দিন তিনেকের মাথায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর।
আমেরিকান বিদেশ দফতরের রাজনৈতিক ও সামরিক বুরোর তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সব ঠিকাদারের কাছে ইতিমধ্যেই এ নিয়ে নোটিস গিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘আফগানিস্তানে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ডাইরেক্টরেট অব ডিফেন্স সেলস কন্ট্রোল সব ধরনের রফতানি সংক্রান্ত লাইসেন্স খতিয়ে দেখছে। আমেরিকার নিরাপত্তা এবং গোটা বিশ্বে শান্তি রক্ষার জন্য যা এখন খুবই প্রয়োজন’।
প্রতিরক্ষা দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শুধুমাত্র গত বছরেই আফগান সরকারকে ২২.৭ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র রফতানি করেছিল বাইডেন প্রশাসন। যার বেশির ভাগটাই এখন তালিবানের হাতে চলে গিয়েছে। তাঁরা যাতে আমেরিকার অস্ত্রে আরও শক্তিশালী না হয়ে উঠতে পারে, তাই অস্ত্র রফতানিতে এই নিষেধাজ্ঞা বলে মনে করা হচ্ছে। তবে শুধু আফগানিস্তানকেই নয়, পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক বছরে গোটা মধ্য এশিয়ায় অস্ত্র রফতানির পরিমাণ বিপুল বাড়িয়েছিল আমেরিকা। সুইডেনের একটি গবেষণা সংস্থা জানাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে আমেরিকার অস্ত্র রফতানির আন্তর্জাতিক শেয়ার বেড়েছিল ৩৭ শতাংশ। চিন আর রাশিয়ার থেকে যা অনেকটাই বেশি।
তবে আমেরিকা আপাতত আফগানিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রাখলেও গত কুড়ি বছরে আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফেরাতে ও সে দেশে উন্নয়নের খাতে আমেরিকান প্রশাসন যে বিপুল অর্থ খরচ করেছে, তা আদৌ কোনও কাজে এল কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
পরিসংখ্যান বলছে, এই কুড়ি বছরে আফগানিস্তানের জন্য এক লক্ষ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ খরচ করেছে ওয়াশিংটন। আমেরিকান কংগ্রেসের একটি পর্যবেক্ষক পদ, ‘দ্য স্পেশ্যাল ইনস্পেক্টর জেনারেল ফর আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশান’ (সিগার) গত ১৩ বছরে আফগানিস্তান খাতে খরচের মূল্যায়ন করে জানিয়েছে, সেখানে করা মোট ১০টি প্রকল্পের অর্থ পুরোপুরি জলে গিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বিমান কেনা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ প্রকল্প, সড়ক নির্মাণ, সেনার জন্য কেনা পোশাক, সেনা প্রশিক্ষণ ভবন এমনকি মাদক-বিরোধী অভিযানও। লক্ষ লক্ষ ডলার এই সব প্রকল্পের পিছনে খরচ করা হলেও পরে দেখা গিয়েছে এই প্রকল্পগুলির একটিও আফগানিস্তান পুনর্গঠনে কাজে আসেনি।