প্রতীকী চিত্র।
প্রথমে সর্দি-কাশি-জ্বর, তার পর তা বাড়তে বাড়তে নিউমোনিয়া। এবং সর্বশেষ পরিণতি মৃত্যু। এ ভাবেই নোভেল করোনাভাইরাস বা ‘সিওভিআইডি-১৯’-এ মৃতের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়েছে চিনে। মারণ ভাইরাসটিকে নিকেশ করতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ‘অস্ত্র’ খুঁজে চলেছেন গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। টেক্সাসের এক দল গবেষকের দাবি, তাঁরা আরও ধাপ এগিয়েছেন। ভাইরাসটি যে বিষাক্ত প্রোটিনকে হাতিয়ার করে প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে, সেটি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন তাঁরা। ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁদের গবেষণাপত্র।
ভাইরাসটিকে রুখতে হলে, তার হাতিয়ার ঠিক কী, সেটা খুঁজে বার করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। প্রথমে সেই কাজটাই করেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি জানা যায়, মানুষের শরীরে একটি বিষাক্ত প্রোটিন ঢুকিয়ে দিচ্ছে ভাইরাসটি। নাম ‘স্পাইক প্রোটিন’। পরবর্তী ধাপ ছিল প্রোটিনটিকে ভাল ভাবে জানা। এটুকু বিজ্ঞানীরা টের পেয়েছিলেন, এক-এক করোনাভাইরাসে এক-এক রকমের আকার নেই প্রোটিনটি। অচেনা শত্রুটিকে আরও ভাল করে চেনার কাজ চলছিল এত দিন। কারণ স্পাইক প্রোটিনটি ঠিক কেমন দেখতে, তা না জানতে পারলে ভাইরাসটিকে রোখা যাবে না। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার বায়োসায়েন্সের অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসর জেসন ম্যাকলেলান দাবি করলেন, ভাইরাসটির আণবিক গঠন জেনে ফেলেছেন তাঁরা। আশা, অস্ত্র ভ্যাকসিন এ বারে হাতে চলে আসবে।
ম্যাকলেলান বলেন, ‘‘করোনাভাইরাস যদিও একাধিক প্রোটিনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, তবু ‘স্পাইক’ প্রোটিনটি সব চেয়ে ভয়ানক। এই প্রোটিনটি মানব কোষের রিসেপটর বা গ্রাহক প্রোটিনে আটকে যায়। এই রিসেপটর প্রোটিনটি অনেকটা মানব কোষের দরজার মতো। স্পাইক প্রোটিন এক বার রিসেপটরে আটকে গেলেই ভাইরাসের মেমব্রেন মানুষের কোষের মেমব্রেনের সঙ্গে জুড়ে যায়। তার পর সহজে ভাইরাসের জিনোম মানুষের কোষে ঢুকে সংক্রমণ শুরু করে দেয়।’’ তিনি জানান, এই ভয়ানক প্রোটিনটিকে বাগে আনতে হলে তাকে দেখতে কেমন, সেটা জানা দরকার হয়ে পড়েছিল। সেই কাজটাই সেরে ফেলেছেন তাঁরা।
এ মাসের শুরুতে কিছু বিজ্ঞানী ‘সার্স-সিওভি-২’-এর জিনোম খুঁজে বার করেন। ম্যাকলেলানের দল ওই জিনোমটিকে ব্যবহার করে স্পাইক প্রোটিনের জিনকে চিহ্নিত করে। নির্দিষ্ট জিনটিকে কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়। এ বার গবেষণাগারে স্তন্যপায়ী প্রাণীর কোষে জিনটিকে ঢুকিয়ে স্পাইক প্রোটিনটিকে তৈরি করা হয়। এর পরে অতি আধুনিক অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে প্রোটিনটির ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) গঠন কেমন, তা বার করে ফেলা হয়।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী অবরে গর্ডন বলেন, ‘‘দারুণ ব্যাপার। খুব দ্রুত ওঁরা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ফেলেছেন।’’ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী স্টিফেন মোর্সও সাধুবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘ভ্যাকসিন তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে এই আবিষ্কার।’’ যদিও খোদ ম্যাকলেলানের আশঙ্কা, কার্যকরী ভ্যাকসিন তৈরি করতে এখনও দেড়, দু’বছরের অপেক্ষা।