হোয়াইট হাউস।
লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ ঘটিয়ে আমদাবাদের ‘কেম ছো ট্রাম্প’-কে সাজাতে তৎপরতা তুঙ্গে মোদী সরকারের। কিন্তু বাণিজ্যচুক্তি ছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছে দু’দেশের। সেটি হল পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়ার প্রসঙ্গ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের ঠিক আগে এই মতপার্থক্য আরও প্রকাশ্যে চলে এল বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা।
সম্প্রতি লস্কর-ই-তইবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদকে পাক আদালত শাস্তি দেওয়ার ঘটনায় ইমরান সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেছে হোয়াইট হাউস। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহ-সচিব অ্যালিস ওয়েলস বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে এটি একটি ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ’। সূত্রের মতে, মার্কিন ইঙ্গিত স্পষ্ট। প্যারিসে আসন্ন এফএটিএফ-এর বৈঠকে ইসলামাবাদকে ধুসর তালিকা থেকে বার করতে এ বার কোমর বাঁধবে আমেরিকা। গোটা বিষয়টি ভারতের কাছে হতাশার বলেই বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হচ্ছে। ভারত মনে করে না শুধুমাত্র হাফিজ সইদকে ‘লোক দেখানো’ শাস্তি দেওয়ার পরই পাকিস্তানকে ‘ক্লিন চিট’ দেওয়ার কারণ আছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে গতকাল এটাও বলা হয়েছে, ওই শাস্তি আদতে কতটা ফলপ্রসূ হয়, সেটাও দেখতে হবে। তা ছাড়া, ভারত-বিরোধী জঙ্গি সংগঠনগুলির পুঁজি বন্ধ করার প্রশ্নে এখনও বহু পথ হাঁটা বাকি ইসলামাবাদের— এটাও মনে করে সাউথ ব্লক।
ভারতের উৎকণ্ঠা আরও বাড়িয়ে সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা পাক সেনা প্রশিক্ষণের কর্মসূচি আবার চালু করা হবে। এ ব্যাপারে মার্কিন বিদেশ দফতরের পক্ষ থেকে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ৭ কোটি ২০ লক্ষ ডলার খরচ করা হবে বলে স্থির করা হয়েছে। ২০১৮-র জানুয়ারিতে এই গোটা কর্মসূচি বন্ধ করা হয়েছিল। ইসলামাবাদকে সন্ত্রাস দমনে আরও চাপ দেওয়ার জন্য সে সময় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ট্রাম্প সরকার। ফলে তা আবার চালু করার অর্থ, পাকিস্তান নিয়ে আমেরিকার একটি বড় মাপের নীতি বদলের স্পষ্ট ইঙ্গিত। যা নয়াদিল্লির জন্য আদৌ সুসংবাদ নয়।
এ ছাড়া, পাকিস্তানকে পাশে নিয়ে আফগানিস্তানের তালিবানের সঙ্গে যে ভাবে চুক্তি করার পথে এগোচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন, সেটিও সাউথ ব্লকের মনপসন্দ নয়। বারবার বিভিন্ন কূটনৈতিক চ্যানেলে ভারত এ কথা ওয়াশিংটনকে বলে আসছে যে, শান্তি চুক্তির পরেও তালিবানের জঙ্গি অংশকে পাকিস্তান নিয়মিত ভাবে অস্ত্র এবং অর্থ সাহায্য করে আসছে। কিন্তু আমেরিকায় নির্বাচনের আগে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের তাড়া রয়েছে ট্রাম্পের। যা ভূকৌশলগত কারণেই পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে করা সম্ভব নয়। তাই পাক সরকারের উপর নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ছে আমেরিকার।