—ফাইল চিত্র।
করোনা প্রতিষেধক নেওয়ার পরে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকাকরণ আপাতত বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করল আমেরিকা।
মঙ্গলবার আমেরিকার ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ) এবং সেন্টার ফর ডিজ়িজ কন্ট্রোল (সিডিসি) যৌথ বিবৃতি দিয়ে এ কথা জানিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এই ধরনের রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ‘বিরল এবং গুরুতর বিষয়’। প্রতিষেধক নেওয়ার কিছু দিন পরে ছয় মহিলার শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা জানা গিয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের শরীরে প্লেটলেটও কমে গিয়েছে। ফলে তাঁদের ক্ষেত্রে কী ধরনের চিকিৎসা কার্যকর হবে, তা-ও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণ শেষ না-হওয়া পর্যন্ত আপাতত বন্ধ থাকবে জনসনের টিকা।
বুধবার বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসবে সিডিসি ও এফডিএ। তাদের পরামর্শ, এই টিকা নেওয়ার পরে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, পেটের ব্যথা, পায়ে যন্ত্রণা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। পাশাপাশি এই ধরনের সমস্যায় রোগীর কেমন চিকিৎসা হবে, সেই বিষয়েও চিকিৎসকদের ওয়াকিবহাল করতে চায় তারা।
আমেরিকায় ফাইজ়ার, মডার্নার পরে ফেব্রুয়ারির শেষে ছাড়পত্র পেয়েছিল জনসনের টিকা। ‘সিঙ্গল শট’ ভ্যাকসিনটি দিয়ে দ্রুত টিকাকরণ সম্ভব এবং তা সংরক্ষণ করাও সহজ। দুইয়ের ভরসায় বিশ্ব জুড়ে বিপুল উৎসাহ তৈরি হয়েছিল। আমেরিকায় ভ্যাকসিনটির ইতিমধ্যে ৬৮ লক্ষ ডোজ় দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা শোনা যায়নি। কিন্তু রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা সামনে আসার পরে এই টিকাকরণ বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে ফাইজ়ার আর মডার্নার টিকাকরণ আগের মতোই চলবে।
এর আগে অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার ভ্যাকসিনেও রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনার কথা জানা গিয়েছিল। ইউরোপের বহু দেশ এই প্রতিষেধকের প্রয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আমেরিকায় অবশ্য এখনও ছাড়পত্র পায়নি অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার টিকা। ইউরোপীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, দু’টি ক্ষেত্রে তারা মিল খুঁজে পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হিমায়িত অ্যাডিনোভাইরাস ব্যবহার করে বানানো দু’টি ভ্যাকসিনই একই পদ্ধতিতে তৈরি। শিম্পাঞ্জির শরীরে পাওয়া অ্যাডিনোভাইরাস ব্যবহৃত হয়েছে অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার টিকায়। আর জনসন ব্যবহার করেছে মানবশরীরে পাওয়া অ্যাডিনোভাইরাস। দু’টি ক্ষেত্রেই কমবয়সিদের মধ্যে বেশি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যে কারণে ৩০ বছরের কমবয়সিদের অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা ছাড়া অন্য কোনও প্রতিষেধক দেওয়ার কথা জানিয়েছে ব্রিটেন।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে টিকাকরণ চালিয়ে যাওয়া জরুরি। তাতে সংক্রমণের সম্ভাবনা অন্তত ৫০% কমে যাচ্ছে। জনসনের প্রতিষেধক নেওয়ার পরে সংক্রমণের ঘটনা ঘটলেও তাতে মৃত্যু বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো ঘটনা এখনও শোনা যায়নি।
তবে করোনাকে হারানো এখনও যে দূর অস্ত— তা জানিয়েছেন হু-এর শীর্ষকর্তা টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস। আজ জেনিভায় সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, ‘‘এ বছর জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারির শুরু পর্যন্ত বিশ্ব জুড়ে সংক্রমণ কমছিল। এখন ফের তা বাড়ছে। তাতে আশার কথা এই যে, আমরা বুঝেছি করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে এত তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণ করোনা-মুক্তির সম্ভাবনা নেই। টিকাকরণের পাশাপাশি মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধি পালন, বার বার হাত ধোওয়া চালিয়ে যেতে হবে।’’
এই মুহূর্তে করোনার যে মিউট্যান্ট স্ট্রেনটি ভয় ধরিয়েছে গোটা বিশ্বের, সেই বি.১.১.৭ স্ট্রেনটি নিয়ে একটি নতুন তথ্য জানিয়েছেন গবেষকেরা। ল্যানসেটে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে জানা গিয়েছে, এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ক্ষমতা আগের স্ট্রেনগুলির তুলনায় বহু গুণ বেশি। তবে মারণ-ক্ষমতা বা অসুস্থ করে তোলবার ক্ষমতাও যে আগের থেকে বেশি, তেমন প্রমাণ মেলেনি। নয়া স্ট্রেনে সংক্রমিত ৩৭ হাজার ব্রিটেনবাসীর উপরে সমীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন গবেষকেরা।
অন্য দিকে, করোনা সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়ের আতঙ্কে ভুগছে দক্ষিণ কোরিয়া। উপসর্গ দেখা দিলে সকলেই যাতে নিজের পরীক্ষা করতে পারেন, সে জন্য ‘সেল্ফ টেস্টিং কিট’-এ আজ ছাড়পত্র দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তবে এই ধরনের কিটের সাফল্যের হার নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।