হামলার আশঙ্কায় ইজ়রায়েল। —ফাইল চিত্র।
আরও ঘোরালো হল পরিস্থিতি। যুদ্ধের ভয়ে কাঁটা পশ্চিম এশিয়া। ইজ়রায়েল সরকারের আশঙ্কা, শীঘ্রই ইরান তাদের উপর বড়সড় হামলার ছক কষছে। আমেরিকাকেও নিজেদের শঙ্কার কথা জানিয়েছে তারা। সত্যিই কি তবে প্রতিশোধের আগুন আছড়ে পড়বে? সম্ভব্য হামলার আশঙ্কায় প্রমাদ গুনছে ইজ়রায়েল। সংবাদসংস্থা রয়টার্সে প্রকাশ, আমেরিকা প্রায় নিশ্চিত যে ইরান ইজ়রায়েল আক্রমণ করবে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, ইরান বা তার ‘ছদ্ম প্রতিনিধি’রা চলতি সপ্তাহেই পশ্চিম এশিয়ায় বড়সড় হামলা চালাতে পারে। তার জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আমেরিকা। তিনি বলেন, “ইজ়রায়েল যে আশঙ্কা করছে, আমরাও সেই একই আশঙ্কা করছি। চলতি সপ্তাহেই তা হতে পারে।”
পশ্চিম এশিয়ার কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমেরিকার অন্যতম বিশ্বস্ত সঙ্গী ইজ়রায়েল। ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ হামলার আশঙ্কা করতেই পশ্চিম এশিয়ায় সামরিক শক্তি বাড়াতে শুরু করেছে আমেরিকা। একটি বিমানবাহী রণতরী আগেই পশ্চিম এশিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আমেরিকা। সোমবার নতুন করে ইজ়রায়েল উদ্বেগ প্রকাশের পর একটি সামরিক ডুবোজাহাজও পাঠাচ্ছে পেন্টাগন। উল্লেখ্য, পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি দীর্ঘ দিন ধরেই তপ্ত হয়ে রয়েছে। সেই উত্তাপ আরও বাড়ে জুলাইয়ে।
গত মাসে ইজ়রায়েল অধিকৃত গোলান উপত্যকায় ক্ষেপণাস্ত্র হানা ১২ কিশোরের মৃত্যু হয়েছিল। এর পর লেবাননের বেইরুটে এক জবাবি হামলা চালায় ইজ়রায়েল। তাতে হিজবুল্লা কমান্ডার ফুয়াদ সুকারের মৃত্যু হয়। এর পরের দিনই ইরানের রাজধানী তেহরানে এক হামলায় মৃত্যু হয় হামাস শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়ার। ইরানের দাবি, ইজ়রায়েলই হামাস নেতার উপর ওই হামলা চালিয়েছে। এর পর তারা হুঁশিয়ারি দেয়, এর পরিণামের জন্য ইজ়রায়েল যেন প্রস্তুত থাকে। সেই থেকেই সম্ভব্য হামলার আশঙ্কায় রয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ইজ়রায়েল সরকার।
ইজ়রায়েল ও আমেরিকার এই শঙ্কা যদি সত্যি হয়, তাহলে পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশে তার প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ইরানের ‘আধিপত্য’ রয়েছে। ছড়িয়ে রেখেছে নিজেদের ‘ছদ্ম প্রতিনিধি’। একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। যাদের সঙ্গে ইরানের সরাসরি কোনও যোগ না থাকলেও, বকলমে যাদের নিয়ন্ত্রণ করে ইরানই। যেমন লেবাননে হিজবুল্লা গোষ্ঠী, গাজ়ায় হামাস গোষ্ঠী, সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের গোষ্ঠী, ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী-সহ আরও একাধিক এমন সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে, যাদের অর্থ ও অস্ত্র উভয় দিক থেকেই মদত দেয় ইরান।
সম্ভব্য হামলার আশঙ্কায় ভুগতে থাকা ইজ়রায়েলও এই প্রেক্ষাপটে নিজের ‘বন্ধু’ রাষ্ট্রগুলিকে কাছে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিম এশিয়ায় স্থিতাবস্থা ফেরাতে আবার সক্রিয় করতে চাইছে ‘আব্রাহাম জোট’। এই শব্দটি এসেছে ‘আব্রাহাম চুক্তি’ থেকে। আমেরিকার মধ্যস্থতায় ২০২০ সালে ওই চুক্তি হয়েছিল। যার লক্ষ্য ছিল ইজ়রায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, বাহরিন, মরক্কো ও সুদানের মধ্যে কূটনৈতিক স্থিতাবস্থা ফেরানো। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, আবার সেই ‘আব্রাহাম জোট’-কে নিজের পাশে চাইছে ইজ়রায়েল।