এইচ১বি ভিসা নিয়ে নতুন চিন্তা। মার্কিন সরকার বছরে মোট যত সংখ্যক ওই ভিসা দেয়, এ বার থেকে তার মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ দেওয়া হতে পারে ভারতীয়দের। ভিসার এই ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার ভাবনার কথা ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে নয়াদিল্লিকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের দাবি।
প্রতি বছর ৮৫,০০০ এইচ১বি ভিসা দেয় আমেরিকা। বর্তমানে এই ভিসার গ্রাহকদের ৭০ শতাংশই ভারতীয়। তাঁদের অধিকাংশই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এইচ১বি ভিসায় কড়াকড়ি শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ বার ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার ভাবনার নেপথ্যে রয়েছে ভারতের একটি বিশেষ সিদ্ধান্তজনিত অসন্তোষ। গত বছর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নির্দেশ দেয়, যে সমস্ত বিদেশি আর্থিক সংস্থা ভারতে সক্রিয় রয়েছে, তাদের গ্রাহকদের লেনদেনের তথ্য ভারতেই জমা রাখতে হবে। এর উদ্দেশ্য, প্রয়োজনমাফিক নজরদারি। মাস্টারকার্ড, ভিসা, আমেরিকান এক্সপ্রেসের মতো সংস্থা এতে ক্ষুব্ধ হয়। সংবাদ সংস্থার দাবি, অসন্তুষ্ট আমেরিকা এইচ১বি-র ঊর্ধ্বসীমার আওতায় সেই সব দেশকে রাখতে চলেছে, যারা বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলিকে স্থানীয় ভাবে তথ্য জমা রাখতে বলেছে। অর্থাৎ ভারতও পড়তে চলেছে সেই তালিকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদেশ মন্ত্রকের দুই কর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থার দাবি, মার্কিন সরকারের পরিকল্পনার বিষয়টি গত সপ্তাহে ওই দুই কর্তাকে জানানো হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রভীশ কুমারের বক্তব্য, ‘‘এ নিয়ে এখনও আমেরিকা আমাদের কিছু জানায়নি। এই বিষয়ে আমরা ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা করব।’’ সূত্রের খবর, এইচ১বি-র ঊর্ধ্বসীমা নিয়ে জরুরি রিপোর্ট তলব করেছে বিদেশ মন্ত্রক। বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তারা কিছু জানে না। মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকও এখনও পর্যন্ত চুপ। তবে মার্কিন বাণিজ্য মহলের একটি সূত্রের বক্তব্য, স্থানীয় ভাবে তথ্য জমা রাখার বিরুদ্ধে সার্বিক ভাবেই প্রতিবাদ করছে আমেরিকা। ফলে বেছে বেছে ভারতকে নিশানা করা হচ্ছে— এমন নয়।
গত মার্চে ট্রাম্প প্রশাসন ভারত থেকে আমদানি করা অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতের উপরে শুল্ক বাড়িয়েছিল। তার পাল্টা আমেরিকা থেকে আমদানি হওয়া ২৯টি দ্রব্যের উপর বাড়তি শুল্ক চাপিয়েছে ভারত। এই বাণিজ্যিক চাপান-উতোরের আবহেই আগামী সপ্তাহে নয়াদিল্লি আসছেন মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ‘ন্যাসকম’ সরাসরি বলেছে, ভিসায় ঊর্ধ্বসীমা চাপানো হলে তাতে মার্কিন সংস্থাগুলিরই ক্ষতি। কারণ, ব্যবসায় এর প্রভাব পড়বে। তাদের মতে, ভারতীয়দের এত বেশি সংখ্যক এই ভিসা পাওয়ার কারণ তাঁদের দক্ষতা। এবং সেই ভিসার মধ্যেও সিংহভাগের খরচ জোগায় মার্কিন ও বহুজাতিক সংস্থাগুলি।