ফাইল চিত্র।
প্রাণভয়ে পালাচ্ছেন সেনেটররা। আর উন্মত্ত জনতাকে রুখতে কার্যত হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছে পুলিশ। গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল-তাণ্ডবের এমনই কিছু খণ্ড-ফুটেজ তুলে ধরে কাল সেনেটে প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিঁধলেন ডেমোক্র্যাটরা। ভোটে হেরে বিদায় নিয়েছেন ট্রাম্প। তবু তাঁর উস্কানিতেই সে দিন ট্রাম্প-সমর্থকেরা ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডব চালিয়েছিল— এই অভিযোগে ট্রাম্পকে ইমপিচ করতে মরিয়া বিরোধী শিবির।
হাউসের পরে সেনেটের ভোটেও ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরুর পক্ষেই সায় মিলেছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে সেনেটে শুরু হয়েছে সেই সংক্রান্ত বিচার প্রক্রিয়া। কাল এরই মধ্যে রিপাবলিকান সেনেটর জোয়াকুইন ক্যাস্ট্রো স্পষ্ট অভিযোগ তুললেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সে দিন ক্যাপিটলে উপস্থিত সবাইকে মেরে ফেলারই বন্দোবস্ত করেছিলেন।’’ এরিক সোয়ালওয়েল বলেন, ‘‘দাঙ্গাকারীরা সে দিন আপনার নামে স্লোগান দিতে-দিতে তাণ্ডব করছিল, আর আপনি মাত্র ৬০ পা দূরে বসে নিশ্চিন্তে পুরো বিষয়টা উপভোগ করছিলেন!’’
ইমপিচ-মামলায় বিরোধীরা কাল যে সব ভিডিয়ো পেশ করেছেন, তার মধ্যে একটিতে দেখা গিয়েছে প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও তাঁর পরিবারকে কী ভাবে লুকিয়ে নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে। পেন্সের ‘অপরাধ’ তিনি ভোটের ফল মেনে নিয়ে সুষ্ঠু ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’ স্লোগান দেওয়া দাঙ্গাকারীরা তাই সে দিন পেন্সের ‘ফাঁসি’র দাবিও তুলেছিল। অভিযোগ, হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির অফিসে ঢুকেও তাঁকে মারতে চেয়েছিল তাণ্ডবকারীদের একাংশ।
আর এ সবের জন্য ট্রাম্পকে কোনও ভাবেই ‘নিরীহ দর্শক’ মানতে নারাজ ডেমোক্র্যাটরা। ৬ জানুয়ারি তাণ্ডবের ঠিক আগে ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের ‘খেপিয়ে তুলতে’ যে বক্তব্য পেশ করেছিলেন, সেটিরও আলাদা আলাদা ফুটেজ কাল আদালতে পেশ করেন ডেমোক্র্যাট আইনজীবীরা। চলতি ইমপিচমেন্ট-মামলার প্রধান ব্যবস্থাপক জেমি রাস্কিন কাল সেনেটে দাঁড়িয়ে দাবি করেন, এই তাণ্ডব শুধু এক দিনের উস্কানির ফল নয়। বরং কয়েক মাস ধরে রীতিমতো পরিকল্পনা করে ট্রাম্প নিজের ‘দাঙ্গা-টিম’ তৈরি করেছেন।
সূত্রের খবর, আগামী সাপ্তাহিক ছুটির আগে পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটরা লাগাতার প্রশ্নবাণ ছুড়বেন। তাঁদের হাতে যুক্তি সাজানোর সময় আপাতত ১৬ ঘণ্টা। তার পরে ওই একই সময় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন ট্রাম্পের আইনজীবীরা।
এই পরিস্থিতিটে ট্রাম্প কী করছেন, জানতে উৎসুক দেশের একটা বড় অংশ। ওয়াশিংটন থেকে হাজার মাইল দূরে তিনি এখন ফ্লরিডার রিসর্টে। হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর থেকে এটাই তাঁর ঠিকানা। বাইরে বেরোনো বলতে শুধু গল্ফ খেলা। কাল তিনি তা-ও করেননি। একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, কাল সারাদিন টিভিতে চুপচাপ মামলা দেখেছেন তিনি। অন্য একটি সূত্র আবার বলছে, নিজের আইনজীবীদের নিষ্ক্রিয়তায় মাঝেমাঝেই মেজাজ হারাচ্ছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। আর তিনি যে স্বেচ্ছায় সেনেটে সাক্ষ্য দিতে আসবেন না, তা-ও ইঙ্গিতে জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।