বাইডেন বলেছেন, ‘‘রাশিয়া যে সত্যিই সীমান্ত থেকে কিছুটা বাহিনী সরিয়েছে, তার প্রমাণ কিন্তু আমরা পাইনি।’’
রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে কিছু পরিমাণ সেনা প্রত্যাহারের কথা গত কাল ঘোষণা করেছিল রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। যা শুনে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ছিল গোটা বিশ্ব। তবে মুখে বাহিনী প্রত্যাহারের কথা বললেও রাশিয়া এখনও যে কোনও সময়েই ইউক্রেনের উপরে হামলা চালাতে পারে বলে ফের আশঙ্কা প্রকাশ করলেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘‘রাশিয়া যে সত্যিই সীমান্ত থেকে কিছুটা বাহিনী সরিয়েছে, তার প্রমাণ কিন্তু আমরা পাইনি। উল্টে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, রুশ সেনা ইউক্রেন সীমান্ত লাগোয়া এমন জায়গায় রয়েছে, যা এখনও যথেষ্ট ভয়ের। তবে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালালে তার ফল ভোগার জন্যও তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা এখনও চাই কূটনৈতিক পথেই এর মীমাংসা হোক।’’
আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সুরে আজ সুর মিলিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কিও। তিনি আজ এক বার্তায় বলেছেন, ‘‘বাহিনী সরানোর যে প্রতিশ্রুতি রাশিয়া দিয়েছিল, বাস্তবে তার কোনও প্রমাণ এখনও আমরা পাইনি।’’ নেটো প্রধান জেন্স স্টলটেনবার্গ এবং আমেরকিান বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও রুশ বাহিনী প্রত্যাহারের মৌখিক প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রমাণ চেয়েছেন। ব্লিঙ্কেন অবশ্য সেই সঙ্গেই আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সুরে বলেছেন, ‘‘আমার এখনও বিশ্বাস, কূটনীতির পথে হেঁটেই এই যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়ানো যাবে।’’ এই পরিস্থিতিতে আজই ইউক্রেনের জটিলতা নিয়ে ব্রাসেলসে বৈঠকে বসার কথা নেটোভুক্ত দেশগুলির প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের।
আজই কিভের ভারতীয় দূতাবাস সেখানে বসবাসকারী ভারতীয়দের অযথা আতঙ্কিত হতে বারণ করেছে। গত কাল ভারতীয় দূতাবাসের তরফে বলা হয়েছিল, আপাতত ইউক্রেনে বসবাসকারী ভারতীয়েরা যেন দেশে ফিরে যান। তার পরেই অনেকে দাবি করেছেন, ভারতে ফেরার বিমানের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। দূতাবাসের তরফে ভারতীয়দের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, এখন ভারত-ইউক্রেন উড়ানের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। কিভের দূতাবাস ও ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে আজ কিছু হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছ, প্রয়োজনে ভারতীয়েরা যাতে সেখানে যোগাযোগ করতে পারেন। কিভের ভারতীয় দূতাবাস আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে না বলেও আজ জানানো হয়েছে।
আজ সকালেই অবশ্য রুশ সরকারের তরফে ফের জানানো হয়, ক্রাইমিয়া উপদ্বীপে মহড়া শেষ করে রুশ বাহিনী নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে যাচ্ছে। একটি সেতু পেরিয়ে ক্রাইমিয়া থেকে বাহিনীর মূল রুশ ভূখণ্ডে ঢোকার ভিডিয়ো-ও পোস্ট করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তবে পশ্চিমী বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, গত কাল এবং আজ রুশ সরকার যে বাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছে, তাতে তাদের ইউক্রেন সীমান্তে উপস্থিতির কোনও হেরফের হওয়ার কথা নয়। বাইডেনের আশঙ্কা সত্যি করেই তাঁরা জানিয়েছেন, যে দক্ষিণ ও পশ্চিম প্রদেশের সেনা প্রত্যাহারের কথা রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের মূল ঘাঁটি ইউক্রেন সীমান্ত থেকে খুব একটা দূরে নয়। ফলে যুদ্ধ পরিস্থিতি হলে খুব সহজেই সেই বাহিনী ফের সীমান্তে মোতায়েন করা যেতে পারে। তা ছাড়া, রাশিয়ার মধ্য ও পূর্ব প্রদেশের যে বাহিনী এখনও সীমান্তে মোতায়েন রয়েছে খুব সহজেই তারা সরাসরি ইউক্রেনের উত্তরাংশের খারকিভ শহরে হামলা চালাতে সক্ষম। সেই সঙ্গে কৃষ্ণ ও আজ়ভ সাগরে রুশ রণতরীর উপস্থিতি আলাদা করে ইউক্রেনের উপকূলীয় এলাকায় চাপ বজায় রেখেছে। ফলে মুখে বাহিনী প্রত্যাহারের কথা বলে বা ভিডিয়ো প্রকাশ করে রাশিয়া আসলে পশ্চিমী দুনিয়ার চোখে ধুলো দিতে চাইছে বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের একাংশের।