আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। —ফাইল চিত্র।
ভূমিসন্তান বা আদি বাসিন্দাদের ভূমিচ্যুত করার ইতিহাস নতুন নয়। ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের ফলে শতকের পর শতক পৃথিবীর সব মহাদেশেই ভূমিসন্তানেরা অকথ্য অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকা— বিভিন্ন দেশের ইতিহাস সেই নিগ্রহের সাক্ষ্য বহন করে। সাম্প্রতিককালে অবশ্য বিভিন্ন রাষ্ট্র সরকারি ভাবে বিবৃতি জারি করে ভূমিসন্তানদের কাছে সেই সব ‘অপরাধের’ জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে। দেশের আইনি পরিকাঠামোর মধ্যে এই সব ভূমিসন্তানকে বিশেষ কিছু সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। আমেরিকাতে, ঠিক তেমন ভাবেই, গত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন ‘নেটিভ আমেরিকান’ জনজাতিদের তাঁদের ভূমির ‘অধিকার’ ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি সে রকমই একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অ্যারিজ়োনা প্রদেশের টুসনে একটি অনুষ্ঠানে পৃথিবীখ্যাত গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের একটি অঞ্চল সেখানকার জনজাতিকে উৎসর্গ করে ওই অঞ্চলটিকে তাঁদের স্মারকভূমি
হিসেবে ঘোষণা করলেন। এই অঞ্চলকে এখানকার জনজাতিরা এখনও তাঁদের ‘বিচরণ ভূমি’ ও ‘পূর্বপুরুষদের পদচিহ্নভূমি’ বলে উল্লেখ করেন। প্রসঙ্গত, এই জমি রাষ্ট্রের জমি। কিন্তু প্রায় ১০ লক্ষ একরের এই জমিতে এ বার তাঁরা নিজস্ব অনেক কাজ করতে পারবেন। যেমন, তাঁরা তাঁদের ধর্মীয় আচরণ পালন করতে পারবেন, এই এলাকার গাছপালা থেকে তৈরি করতে পারবেন ওষুধ, সেই সব গাছপালাকে যত্নে রাখতে পারবেন, কারণ তার মধ্যে কিছু গাছপালা শুধু ওই অঞ্চলেই পাওয়া যায়। আর এই সব কিছু তাঁরা রেখে যেতে পারবেন তাঁদের উত্তরপ্রজন্মের জন্য।
এই কাজটি কিন্তু সহজে হয়নি। প্রথমে ওই এলাকায় বসবাসকারী কিছু জনজাতি একটি ‘জোট’ তৈরি করেন। সেই জোটের বহু প্রচেষ্টার ফলে এই বিল পাশ হয়েছে। ওই অঞ্চলের প্রত্যন্তে বাস ‘হ্যবাসুপাই’ জনজাতির মানুষের। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ক্যাবিনেটের একমাত্র ও প্রথম ‘নেটিভ আমেরিকান’ প্রতিনিধি ডেব হ্যাল্যান্ডকে তাঁরা জানিয়েছিলেন, কী ভাবে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নকে ‘ন্যাশনাল পার্ক’ ঘোষণা করার ফলে তাঁদের এবং আরও বহু জনজাতিকে নিজস্ব বাসভূমি থেকে উৎখাত হতে হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। ওই অঞ্চলে রয়েছে বেশ কিছু ইউরেনিয়াম খনি। কিন্তু ওই অঞ্চলকে ‘জাতীয় স্মারক’ হিসেবে ঘোষণা করার
পরে সেখান থেকে আর ইউরেনিয়াম খনন করা যাবে না। আজকের ব্যবসায়িক পৃথিবীতে এই সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন জনজাতি প্রতিনিধিরা।