শি জিনপিং এবং ন্যান্সি প্যালোসি। ফাইল ছবি।
চিনের আপত্তি উড়িয়ে আমেরিকার কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি প্যালোসি তাইওয়ানে পা রেখেছেন। আর তার অভিঘাত পৌঁছে গিয়েছে বেজিং পর্যন্ত। তাইওয়ানকে নিশানা করে সাঁজোয়া গাড়ি, যুদ্ধবিমান, ট্যাঙ্কের কুচকাওয়াজের পাশাপাশি তাইওয়ানকে এ বার ‘ভাতে মারার’ পরিকল্পনা কষছেন শি জিনপিং।
দক্ষিণ চিন সাগরের স্বশাসিত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানকে নিয়ে চিনের দাবিদাওয়া নতুন কোনও ব্যাপার নয়। বস্তুত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই তাইওয়ানকে চিন নিজেদের অংশ বলেই দাবি করে এসেছে। যদিও তাইওয়ানের বাসিন্দারা তা মানতে নারাজ। সেই বিবাদ যেন আবার নতুন করে উস্কে উঠেছে পেলোসির ঐতিহাসিক সফরকে কেন্দ্র করে। ক’দিন আগেই প্রস্তাবিত সফরের বিরোধিতা করে শি জিনপিং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বলেছিলেন, আগুন নিয়ে খেলার ফল হবে মারাত্মক! কিন্তু তাতেও পেলোসির সফর আটকায়নি। এ বার চিন আমেরিকাকে সরাসরি হুমকির পাশাপাশি তাইওয়ানকে উচিত শিক্ষা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে।
ইতিমধ্যেই নেটমাধ্যম ছেয়ে গিয়েছে চিনের সৈন্য তৎপরতার ছবিতে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামরিক ভাবে নয়, তাইওয়ানকে ভাতে মারতে পরিকল্পনা গোছাচ্ছে বেজিং। কিন্তু কী ভাবে তা সম্ভব? তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সহযোগী চিন। গত বছর দু’দেশের মধ্যে ব্যবসার পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। বেজিং রাতারাতি তা বন্ধ করে দিয়েছে। পেলোসি তাইপের মাটি ছোঁয়ার আগেই তাইওয়ানের শতাধিক সরবরাহকারীর থেকে খাদ্যপণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল। বুধবার সকালে চিনের বাণিজ্য মন্ত্রক তাইওয়ানে বালি পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। একই ভাবে চিনের সংস্থাগুলো তাইওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ রদ করেছে। তাইওয়ানের সঙ্গে আপাতত সমস্ত বাণিজ্যিক লেনদেনও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মুহূর্তে হয়তো সরাসরি সামরিক পদক্ষেপের পথে যাবেন না শি। তাই বাণিজ্যিক ভাবে তাইওয়ানের উপর চাপ বৃদ্ধির কৌশল। কারণ তাইওয়ানে আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় কর্তার উপস্থিতিতে সামরিক পদক্ষেপ আরও জটিল আকার নিতে পারে। কিন্তু এই প্রেক্ষিতেই ভাসছে অন্য একটি প্রশ্ন। তা হল, আসন্ন পার্টি কংগ্রেসের আগে তাইওয়ান নিয়ে দুর্বল অবস্থান শি জিনপিংয়ের পক্ষে সুবিধাজনক হবে কি? এই মুহূর্তে চিনের নড়বড়ে অর্থনৈতিক অবস্থাও বেজিংয়ের উপর চাপ বাড়িয়েছে। তাই আগ বাড়িয়ে সামরিক পদক্ষেপের পরিণতি নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন খোদ বেজিংয়ের কর্তারাই, অন্তত এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।