ঠিক যেন অদ্ভুত দেখতে এক তিনমাথা ড্রাগন। রাশিয়ার রূপকথা থেকে বাস্তবের মাটিতে উঠে এসেছে ড্রাগন জেমেই গোরিনিচ। যার তিনটি মাথা এবং দুই পাশে দেহের তুলনায় ছোট দুটো ডানা।
সামনে থেকে দেখলে অনেকটা এ রকমই দেখতে লাগে ‘দ্য বার্টিনি বেরিভ ভিভিএ-১৪’ বায়ুযান।
আমেরিকার ডুবোজাহাজ হামলার জবাব দিতে এক সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের হাতিয়ার ছিল এটিই। যদিও এই হাতিয়ার এক বারও কাজে লাগাতে পারেনি তারা।
ভিভিএ-১৪ এর পুরো অর্থ ‘ভার্টিকল টেক অফ অ্যাম্ফিবিয়াস এয়ারক্র্যাফ্ট’। ১৪ হল এর ইঞ্জিনের সংখ্যা।
এই যান এমন ভাবে বানানো হয়েছিল যাতে কোনও রানওয়ে ছাড়া যে কোনও জায়গা থেকেই টেক অফ করতে পারে।
ইঞ্জিনিয়ার রবার্ট বার্টিনি এর নকশা বানিয়েছিলেন। ক্ষেপণাস্ত্র বহন করা ডুবোজাহাজ খুঁজে ধ্বংস করার জন্য উপযুক্ত করে বানানো হয়েছিল এটিকে।
১৯৭০ সালে এই প্রজেক্ট শুরু করেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। এ রকম ৩টি যান বানানোর কথা ছিল। কিন্তু মাঝপথেই থমকে যায় প্রজেক্ট।
ইঞ্জিনিয়ার রবার্ট বার্টিনির মাথায় এ রকম নানা অভাবনীয় পরিকল্পনা খেলা করত। সেগুলোর মধ্যেই একটির বাস্তবায়ন ছিল ভিভিএ ১৪। কিন্তু ১৯৭৪ সালে বার্টিনির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে প্রজেক্টিও মাঝপথেই শেষ হয়ে যায়।
সব মিলিয়ে মোট দু’টি যান বানানো হয়েছিল। যার মাত্র একটিই আকাশে উড়েছিল। অন্যটি ভেঙে ফেলা হয়।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ মাত্র এই ৩ বছর সক্রিয় ছিল ভিভিএ ১৪। এই সময়ের মধ্যে মোট ১০৭ বার উড়েছে এই যান।
এর দৈর্ঘ্য ছিল ৮৫ ফুট ২ ইঞ্চি। উচ্চতায় ২২ ফুট ৩ ইঞ্চি। ঘণ্টায় ৭৬০ কিলোমিটার গতিবেগে ছুটে যেতে পারত এই যান। সর্বাধিক ৩ জন এতে উঠতে পারতেন।
তার পর থেকে সেটি প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়েই পড়ে ছিল। ১৯৮৭ সালে এই বায়ুযানটি মস্কোর কাছে বিমানবাহিনীর কেন্দ্রীয় জাদুঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে জাদুঘরে নিয়ে যাওয়ার সময় এর যন্ত্রাংশের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। অবস্থা এমনই দাঁড়ায় যে সেটি আর উড়তেও পারছিল না।
সেই থেকে এ ভাবেই একে জাদুঘরে রাখা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত এটির মেরামতি করা সম্ভব হয়নি।