কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত, জানতে চায় রাষ্ট্রপুঞ্জে। — ফাইল চিত্র।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা বা নিজের ধর্মাবলম্বনের প্রশ্নে ভারতের সংখ্যালঘুদের উপরে এখনও নির্দেশ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে কি? ঘৃণার ভাষ্য কি কমেছে কিছুটা? নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পুনর্বিবেচনা করা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কোনও ভাবনাচিন্তা আছে কি? সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া, মতামত প্রকাশে অসহিষ্ণুতা নিয়ে যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, তাকত দূর বাস্তব?
প্রশ্ন অনেক!
আমেরিকা এবং পশ্চিমের বিভিন্ন দেশ ভারতের মানবাধিকার সংক্রান্ত পরিস্থিতি নিয়ে এই আগাম প্রশ্নপত্র পাঠিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদকে। পরিষদের পক্ষ থেকে জেনিভায় চলছে ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর)। এই সপ্তাহে ভারতের দেওয়া রিপোর্ট খতিয়ে দেখছে পরিষদ। সূত্রের খবর, আমেরিকার জো বাইডেন প্রশাসন, ব্রিটেন, কানাডা, জার্মানি, বেলজিয়ামের পক্ষ থেকে গুচ্ছ প্রশ্ন জমা হয়েছে আগাম।
ভূকৌশলগত অস্থিরতার মধ্যে ভারত ভারসাম্যের কূটনীতি নিয়ে চেষ্টা করছে আমেরিকা তথা পশ্চিম এবং রাশিয়া উভয়পক্ষেরসঙ্গে সমান ভাবে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে। যুদ্ধ বন্ধ করতে ভারতের ভূমিকাকে এক দিকে স্বাগত জানাচ্ছে আমেরিকা, অন্য দিকে রাশিয়া উচ্চকন্ঠে প্রশংসা করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। কূটনৈতিক ভাবে এই সুবিধাজনক জায়গাটি ক্রমশ অর্জন করে যখন নিজেদের জাতীয় স্বার্থের শর্তে উঁচু গলায় কথা বলছে সাউথ ব্লক, তখন এই অভিযোগগুলি আন্তর্জাতিক বাতাসে ভেসে বেড়ানোয় যথেষ্ট বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়েছে মোদী সরকারকে। এই নিয়ে প্রশ্নোত্তর সামাল দেওয়া এবং মানবাধিকার নিয়ে দেশের রেকর্ডকে অক্ষত রাখার জন্য জেনিভা পাঠানো হয়েছে দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে। সঙ্গে রয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের সচিবরা।
মানবাধিকার পরিষদ প্রস্তাবিত বিভিন্ন পদক্ষেপ কোন দেশ কতটা নিতে পারল, তার প্রামাণ্য নথি প্রতি বছর জমা দিতে হয় রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে কমিশন এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের বাকি রাষ্ট্রগুলিও। এ বারে বাইডেন সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সংক্রান্ত নির্দিষ্ট প্রশ্নাবলী আগাম জমা পড়েছে কমিশনের কাছে। তাতে জানতে চাওয়া হয়েছে সাম্প্রদায়িক হিংসা বন্ধ করতে অথবা ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে কোনও সরকারি কর্তা, ব্যক্তি, বা গোষ্ঠীর হুমকি বা আক্রমণ থামাতে, শাস্তি দিতে, ঘটনার অনুসন্ধান করতে মোদী সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে। বেলজিয়ামের পক্ষ থেকে মানবাধিকার পরিষদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, সংখ্যালঘুদের নিশানা করা নাগরিকত্ব আইন, ধর্মান্তরণ বিরোধী আইনগুলি নিয়ে কি ভারত পুনর্বিবেচনা করছে বা ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে?
প্রসঙ্গত ভারত ৫ অগস্ট রাষ্ট্রপুঞ্জে মানবাধিকার সংক্রান্ত জাতীয় রিপোর্ট জমা দেয়। সেই রিপোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে মানবাধিকার রক্ষা এবং তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলির বিশদ উল্লেখ করা হয়েছে।