প্রতীকী ছবি।
করোনা সংক্রমণের হার মাথা নামানোয় ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ তুলতে শুরু করেছে রাজ্যগুলি। তার ফলে সারা দেশে বেকারত্বের হার কিছুটা কমেছে বলে দাবি করল উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র রিপোর্ট। সেখানে জানানো হয়েছে, ডিসেম্বরের ৭.৯১% থেকে জানুয়ারিতে ওই হার হয়েছে ৬.৫৭%। যা ২০২১ সালের মার্চের পর সবচেয়ে কম। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হল, গ্রামাঞ্চলে (৫.৮৪%) বেকারত্ব কমলেও শহরে (৮.১৬%) তা যথেষ্ট বেশি।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, বেকারত্ব মাথাচাড়া দিচ্ছিল আগে থেকেই। করোনাকালে লকডাউন বা স্থানীয় বিধিনিষেধের জেরে তা আরও বেড়েছে। অসন্তোষ ছড়াচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। সম্প্রতি বিহারের গয়ায় ট্রেন পুড়েছে। অশান্তি হয়েছে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে। সবই কাজকে কেন্দ্র করে। মানুষের হাতে রোজগার না থাকলে যে সামাজিক স্থিতি বিঘ্নিত হবে সে ব্যাপারে অতীতে সতর্ক করেছিলেন রঘুরাম রাজন-সহ একাধিক অর্থনীতিবিদ। এই অবস্থায় বেকারত্বকে যুঝতে বাজেটে কিছু ঘোষণা থাকবে বলে আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। বরং দরিদ্র মানুষের হাতে রোজগার পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের বরাদ্দ কমেছে। সরকার বরং নজর দিয়েছে মূলধনী খরচ বাড়িয়ে কাজ তৈরির অনুকূল পরিস্থিতি গড়ার দিকে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এতে লাভ হতে পারে দীর্ঘ মেয়াদে। অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে চটজলদি মানুষের হাতে কাজ তুলে দেওয়ার টোটকার সংস্থান রাখেননি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফলে বিধিনিষেধ শিথিলের ফলে বেকারত্বের হার কিছুটা কমলেও অদূর ভবিষ্যতেও তা একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় থেকে যাবে। বিশেষ করে কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পের ফলে গ্রামের দিকে তা কিছুটা কমলেও শহর ঘিরে উদ্বেগ থাকবেই। বিশেষ করে ছোট-মাঝারি শিল্প, পর্যটন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র যখন কোণঠাসা।
সিএমআইই-র রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গত মাসে পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের হার ছিল ৬.৪%। জাতীয় গড়ের চেয়ে সামান্য কম। ওই হার সবচেয়ে নিচু তেলঙ্গানায় (০.৭%)। তার পরে রয়েছে গুজরাত (১.২%), মেঘালয় (১.৫%) এবং ওড়িশা (১.৮%)। হরিয়ানায় (২৩.৪%) বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। দিল্লি, রাজস্থান, ত্রিপুরা, বিহার-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে এখনও ওই হার রয়েছে দুই অঙ্কে।
দেশে বেকারত্ব যে উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে, তা বোঝা গিয়েছিল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের (এনএসও) ফাঁস হয়ে যাওয়া রিপোর্টে। সেখানে জানানো হয়েছিল, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ওই হার ছিল ৬.১%, যা গত সাড়ে চার দশকের সর্বোচ্চ। পরে সেই রিপোর্টের সত্যতা মেনে নেয় কেন্দ্র। সিএমআইই-র রিপোর্ট অনুযায়ী করোনাকালে তা আরও বাড়ে।