—প্রতীকী চিত্র।
শুধু রাজার সইটুকু করা বাকি। তার পরেই ব্রিটেনের নতুন শরণার্থী নীতি পরিণত হবে আইনে।
সোমবার গভীর রাতে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে দীর্ঘ বিতর্কের পরে এই শরণার্থী বিল পাশ হয়েছে। এই বিলের কড়া সমালোচনা করে রাষ্ট্রপুঞ্জ বলেছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে শরণার্থীদের পুনর্বাসন নিয়ে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ব্রিটেন, নতুন বিলটি তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ব্রিটেনের কনজ়ারভেটিভ সরকার বরাবরই কড়া শরণার্থী নীতির পক্ষে সওয়াল করে এসেছে।
ঋষি সুনকের পূর্বসূরি বরিস জনসন প্রথম ‘রোয়ান্ডা প্ল্যান’-এর ঘোষণা করেছিলেন। গত মাসে সেই পরিকল্পনা বাতিল করে দেয় মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় আদালত। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ঋষি সুনক ‘নৌকা ফেরত পাঠাও’ নামের বিলটি পার্লামেন্টে পেশ করেন। বিলে বলা হয়েছে, ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যে সব শরণার্থী ছোট ছোট নৌকা করে ব্রিটেনের উপকূলে এসে পৌঁছন, তাঁদের ব্রিটেনে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া যাবে না। ব্রিটেনের পছন্দ মতো কোনও ‘তৃতীয়’ দেশ, যেমন আফ্রিকার অত্যন্ত দরিদ্র দেশ রোয়ান্ডায়, পাঠিয়ে দেওয়া হবে। নিজের দেশে আইনে পরিণত হওয়ার পরে ব্রিটেনকে ফের এই আইন ইউরোপীয় আদালতে পেশ করতে হবে। সুনক সরকার জানিয়েছে, গত বছরের রায়ের বিরুদ্ধে আগামী মাসেই আদালতে আপিল করবে তারা।
এই বিলটি নিয়ে পার্লামেন্টে বেশ কিছু দিন ধরেই বিতর্ক চলছে। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স শেষ পর্ষন্ত কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব করে বিলটি হাউস অব লর্ডসে পাঠায়। সূত্রের খবর, বিশেষ পরিবর্তন না করেই শেষ পর্যন্ত বিলটি পাশ করে দিয়েছে হাউস অব লর্ডস। প্রসঙ্গত, পার্লামেন্টের এই উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিরা, অর্থাৎ ‘লর্ড’রা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন।২০১৮ থেকে ব্রিটেনে এসে পৌঁছনো শরণার্থীর সংখ্যা দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে। গত বছর ৪৫ হাজারেরও বেশি শরণার্থী ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ব্রিটেনে এসে পৌঁছেছিলেন। এই সংখ্যাটা তার আগের বছরের থেকে ৬০ শতাংশ বেশি। নতুন বিল পেশ করে সুনক সরকার দাবি করেছিল, অতিমারি ও ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্রিটেনের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে কড়া হাতে শরণার্থী সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, আগামী ভোটে এই শরণার্থী নীতিই কনজ়ারভেটিভ দলের জেতার অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপুঞ্জ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ক দফতরের প্রধান ভোল্কার টার্ক এবং শরণার্থী বিষয়ক দফতরের প্রধান ফিলিপো গ্র্যান্ডির সই করা এই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আন্তর্জাতিক মহলের কাছে সাহায্যের প্রত্যাশী যে সব শরণার্থী, ব্রিটেনের এই আইন তাদের উপরে নিদারুণ প্রভাব ফেলবে। এত দিন ধরে একটি আইনি কাঠামোর সাহায্যে শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানো যেত। ব্রিটেনের নতুন আইন সেই কাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে। এর ফলে শরণার্থীদের আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলা দেওয়া হল।’’
আজই ডর্সেটের পোর্টল্যান্ড বন্দরে পাঁচশোরও বেশি শরণার্থী নিয়ে একটি নৌকা এসে পৌঁছেছে। এ ধরনে শরণার্থীর ভবিষ্যৎ কী হবে, এখনও স্পষ্ট নয়। ‘রোয়ান্ডা প্ল্যান’ যে হেতু এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, এবং অন্য কোনও দেশের সঙ্গেও ব্রিটেনের শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে কোনও চুক্তি হয়নি, তাই এখনই শরণার্থীদের ব্রিটেন থেকে বার করে দিতে পারবে না সুনক সরকার। তবে তাঁদের সরকারি ভাবে ‘শরণার্থী’ তকমা দিয়ে সরকারি সুযোগ সুবিধাও দিতে রাজি নয় ব্রিটেন। ফলে বেআইনি ভাবে এ দেশে ঢোকা মানুষ, বিশেষত শিশু ও মহিলাদের, আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতির সামনে পড়তে হতে পারে। এর ফলে শরণার্থী মহিলা ও শিশুদের পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা বহু গুণ বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা এ দেশের মানবাধিকার কর্মীদের।