দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে বিমানের ভগ্নাবশেষ। ফাইল চিত্র।
আকাশ থেকে আগুনের গোলার মতোই নেমে এসেছিল ইউক্রেনের যাত্রিবাহী বিমানটি। বুধবার সাত সকালে ভয়ঙ্কর ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল বিমানে থাকা ১৭৬ জনের। তার ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই, বৃহস্পতিবার ইরানের তদন্তকারী সংস্থা জানিয়ে দিল, মাটিতে ভেঙে পড়ার আগেই আগুন ধরে গিয়েছিল দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই বিমানটিতে।
ইরানের অসামরিক বিমান সংস্থার প্রাথমিক তদন্ত বিমানটির ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’র দিকেই ইঙ্গিত করেছে। সংস্থার তরফে, প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে দুর্ঘটনার সময় বিমানবন্দরের আশপাশে থাকা লোকজন এবং অনেক উঁচু দিয়ে যাওয়া অন্য একটি বিমানের যাত্রীদের বয়ান তুলে বলা হয়েছে, ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটিতে আগুন ধরে যায় এবং সেটি মাটিতে ভেঙে পড়ে।
তেহরানের ইমাম খামেনেই বিমানবন্দর থেকে কিয়েভগামী ইউক্রেনের ওই বোয়িং জেটটি তিন বছরের পুরোন। গত ৬ জানুয়ারি ওই জেটটির মেরামতির কথাও ছিল। তবে তা শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেছিল কিনা সেটা স্পষ্ট নয়। বিমানটিতে ঠিক কী ধরনের গন্ডগোল ছিল তা এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি ইরানের তদন্তকারী সংস্থাটি। যদিও, দুর্ঘটনার পর পরই তেহরানে অবস্থিত ইউক্রেনের দূতাবাসের তরফে বলা হয়েছিল ওই বিমানটির ইঞ্জিনে ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’ ছিল। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য ওই মন্তব্য থেকে সরে আসে কিয়েভ। গত কাল বিমান দুর্ঘটনায় নাশকতার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ওলেকসি হঞ্চারুক।
তবে, এই রহস্যের মধ্যেই এ দিন নতুন আলো ফেলেছে পাঁচটি নিরাপত্তা সংস্থা। নাম জানাতে অনিচ্ছুক তিনটি মার্কিন, একটি ইউরোপিয়ান ও একটি কানাডার নিরাপত্তা সংস্থার কথা উল্লেখ করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, প্রাথমিক অনুমান, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নয়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়েছিল।
তবে, দুর্ঘটনার পিছনে সব রকম কারণই এখন খতিয়ে দেখছে ইউক্রেন। সেই সঙ্গে এ নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রেও সাবধানী কিয়েভ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির ঝেলেনস্কি সেই কথাই জানিয়েছেন। বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে জল্পনা ও ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব থেকে দূরে থেকে সাধারণ মানুষকে দূরে থাকার জন্য একটি টিভি বার্তায় আবেদন জানিয়েছেন তিনি। এ দিন জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে ইউক্রেনে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই বিমানে বেশিরভাগ যাত্রীই ছিলেন ইরান ও কানাডার বাসিন্দা।
টরন্টোয় বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণ। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন হামলায় ইরানের সেনা জেনারেল কাসেম সোলেমানির মৃ্ত্যুর পর থেকেই তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কূটনীতির পারদ চড়ছে। বুধবার সকালে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চালিয়েছিল ইরান। তার মধ্যেই তেহরানের ইমাম খামেনেই বিমানবন্দর থেকে ওড়ার পরেই ভেঙে পড়ে ইউক্রেনের ওই বিমানটি। ফলে, দুর্ঘটনার পিছনে নাশকতা রয়েছে, এমন জল্পনাও উঠে আসছিল বিভিন্ন মহল থেকে।