পোপ ফ্রান্সিস। —ফাইল চিত্র।
দু’বছর হয়ে গেল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। পূর্ব ইউক্রেনের একটা বড় অংশ এখন রাশিয়ার দখলে। সেই সব জায়গায় নিজেদের প্রশাসনিক ব্যবস্থাও তৈরি করে ফেলেছে তারা। এ দিকে, ইউক্রেনে হাজার হাজার মৃত্যু, লাখো বাসিন্দা ঘরহারা। বারবার শান্তি বৈঠক করেও মীমাংসা হয়নি। সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি কোনও পক্ষ। এ অবস্থায় এক সাক্ষাৎকারে পোপ ফ্রান্সিস মন্তব্য করলেন, ইউক্রেনের উচিত সাহস করে ‘সাদা পতাকা’ দেখানো ও সমঝোতার পথে যুদ্ধ থামানো। পোপের কথায় খুশি ক্রেমলিন। প্রবল ক্ষুব্ধ ইউক্রেন। তারা জানিয়েছে, তারা ‘কখনওই আত্মসমর্পণ করবে না’।
ফেব্রুয়ারি মাসে একটি সাক্ষাৎকার দেন পোপ ফ্রান্সিস। শনিবার সেটি সম্প্রচারিত হয়েছে। সেখানে তিনি ইউক্রেন প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, যারা শক্তিশালী, তারা পরিস্থিতি বিচার করে, মানুষের কথা ভাবে এবং সাদা পতাকা দেখানোর সাহস রাখে, সমঝোতার চেষ্টা করে।’’ পোপের মন্তব্যে খুশি মস্কো। তারা জানিয়েছে, যুদ্ধ থামাতে পোপ যা চাইছেন, সেটা যুক্তিসঙ্গত। তারা আলোচনায় বসতেও রাজি বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। কিন্তু পোপের উপর বেজায় ক্ষুব্ধ ইউক্রেন। তারা জানিয়ে দিয়েছে, রাশিয়ার কাছে কখনওই আত্মসমর্পণ করবে না তারা। দু’বছর ধরে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর পরে পোপের মন্তব্য মেনে নেওয়া যায় না বলেও জানিয়েছে তারা। ইউক্রেনীয় আধিকারিকদের বক্তব্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নাৎসি জার্মানির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল ক্যাথলিক গির্জা। এ-ও তেমনই।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভের কথায়, ‘‘পোপ কেন সমঝোতার পক্ষে, সেটা স্পষ্ট।’’ তাঁদের বক্তব্য, কিভ আলোচনা চাইছে না, কারণ তারা বিশ্বাস করে, পশ্চিমি শক্তি রাশিয়াকে হারাতে পারবে। পেসকোভ দাবি করেছেন, তাঁরা যে সমঝোতায় আগ্রহী ও খোলা মনে কথা বলতে চান, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার করে সে কথা বলেছেন। কিন্তু ইউক্রেন সমঝোতার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, ‘‘আমাদের পতাকার রঙ হলুদ ও নীল। এই পতাকার নীচেই আমরা বাঁচব, মরব এবং বিজয়ী হব। অন্য কোনও পতাকা মানব না।’’ পোপের মন্তব্য নিয়ে ক্যাথলিক খ্রিস্টান কুলেবা বলেন, ‘‘যে সাদা পতাকার কথা উনি বলছেন, ভ্যাটিকানের ওই কৌশল আমরা জানি। বিংশ শতকের প্রথমার্ধে আমরা দেখেছি। অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি আমরা করব না।’’ পোপ যে সমঝোতার কথা বলছেন, সেটা অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে কথা বলার শামিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সমাজমাধ্যমে কুলেবা লিখেছেন, ‘‘একটাই শিক্ষা আমরা পেয়েছি— যুদ্ধ শেষ করতে চাইলে ড্রাগনকে হত্যা করা হবে!’’
পোপের সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচারিত হওয়ার পরে ভ্যাটিকানের তরফে জানানো হয়েছে, পোপ শুধুমাত্র এই ভয়াবহ যুদ্ধ থামানোর কথা বলতে চেয়েছিলেন। ভ্যাটিকানের এই ব্যাখ্যায় খুশি নয় ইউক্রেন। রবিবার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি বলেন, ‘‘ইউক্রেনের সব ধর্মবিশ্বাসের মানুষ একজোটে রুশ আক্রমণ থেকে দেশকে বাঁচাবে। খ্রিস্টান, মুসলিম, ইহুদি— সকলে। প্রার্থনা, আলোচনা ও কাজ— সব দিক থেকে সাহায্য করবে।’’
রবিবারও রুশ হামলায় পূর্ব ইউক্রেনে ৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মিরনোগ্রাড শহরে বসতি এলাকায় রুশ গোলাবর্ষণে ১২ জনের বেশি জখম। খারকিভেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে মস্কোর বাহিনী। মধ্য ও দক্ষিণ ইউক্রেনে ড্রোনের সাহায্যে বোমা ফেলেছে তারা। রাশিয়ার দাবি, তারা নিজেদের দেশের নিরাপত্তার জন্য ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে। যুদ্ধ নয়, এ হল ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’। কিভের কথায়, ‘‘এ আসলে ঔপনিবেশিক কৌশলে আগ্রাসন।’’