খোশমেজাজে: লিয়ো ভারাদকর এবং বরিস জনসন। এএফপি
কয়েক দিন বন্ধ থাকার পরে আগামিকাল ফের শুরু হবে পার্লামেন্টের অধিবেশন। রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের ব্রেক্সিট-বক্তৃতা দিয়ে এই অধিবেশন শুরু হবে। প্রথা অনুযায়ী রানি বক্তৃতা শুরু করেন, ‘আমার সরকার নিম্নলিখিত এই সব আইন আনতে চায়’ এই বাক্যটি দিয়ে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকারের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতাই নেই। ফলে এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী আদৌ কোনও আইন আনতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সব দলের এমপিদের মধ্যেই যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
সরকার কোন পথে চলতে চায়, সেই প্রসঙ্গই থাকে রানির বক্তৃতায়। ফলে বরিসের ব্রেক্সিট দিশা নিয়ে এই বক্তৃতায় বেশ কিছু কথা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, বরিসের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে খুশি নন রানি।
ফলে তিনি সরকার-বিরোধী কথাবার্তাও বলতে পারেন। যা-ই বলুন না কেন, রানির বক্তৃতা নিয়ে সপ্তাহভর আলোচনা চালাবেন ব্রিটিশ এমপিরা।
এখন যে পথে • সোমবার ১৪ অক্টোবর: ফের শুরু পার্লামেন্টের অধিবেশন। রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের বক্তৃতা। • বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর: দু’দিনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শুরু হবে ব্রাসেলসে। ৩১ অক্টোবরের আগে ব্রেক্সিট নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নেতাদের সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের এটাই শেষ বৈঠক। • শনিবার ১৯ অক্টোবর: ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন। ব্রিটেন যদি ফের ব্রেক্সিট পিছোতে চায়, এই তারিখের মধ্যেই তা ইইউ-কে জানাতে হবে। • বৃহস্পতিবার ৩১ অক্টোবর: ব্রেক্সিটের নির্ধারিত তারিখ
দিন কয়েক আগেও মনে হচ্ছিল, ৩১ অক্টোবর কিছুতেই চুক্তি-সহ ব্রেক্সিট করা সম্ভব হবে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী জনসনের প্রস্তাবিত নতুন ব্রেক্সিট নকশা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর আদপেই মনে ধরেনি। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিয়ো ভারাদকরের সঙ্গে জনসনের বৈঠকের পরে অবশ্য মেঘ কিছুটা কেটেছে। রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড (স্বাধীন রাষ্ট্র) এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের (ব্রিটেনের অংশ) সীমান্ত নিয়ে বরিস জনসন যে দিশা দখিয়েছেন, তা নাকি মনে ধরেছে আইরিশ প্রধানমন্ত্রীর।
ভারাদকরের এই ‘সমর্থন’কে হাতিয়ার করে ১৭ তারিখ ব্রাসেলস যাচ্ছেন জনসন। ১৭-১৮ তারিখ ৩১ অক্টোবরের আগে শেষ বারের মতো বৈঠকে বসছেন ইইউ নেতারা। থাকছেন বরিস জনসনও। দু’দিনের এই বৈঠকে জনসন ইইউ নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন, আয়ারল্যান্ড সীমান্ত সমস্যার এই সমাধান যে হেতু আইরিশ প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ হয়েছে, তাই ইইউ এই নতুন নকশা মেনে নিক। বা চুক্তি ছাড়া ব্রিটেনকে ইইউ থেকে বেরিয়ে যেতে দিক।
ইইউয়ের কাছ থেকে যদি বরিস নতুন চুক্তিতে সমর্থন আদায় করতে পারেন, তা হলে আগামী শনিবার, ১৯ অক্টোবর, পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে সেই চুক্তি পেশ করবেন তিনি। বল তখন যাবে ব্রিটিশ এমপিদের কোর্টে। তাঁরা সে দিন ঠিক করবেন, বরিসের প্রস্তাবিত চুক্তি সমর্থনযোগ্য কি না।
শনিবার সাধারণত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কোনও অধিবেশন বসে না। ৮০ বছরের ইতিহাসে এর আগে মাত্র চার বার শনিবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অধিবেশন বসেছিল। শেষ বার সেই ‘সুপার স্যাটারডে’ হয়েছিল ১৯৮২ সালে, আর্জেন্টিনার ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে সামরিক অভিযান চালানোর সময়ে। তখন প্রধানমন্ত্রীর আসনে ‘লৌহমানবী’ মার্গারেট থ্যাচার। তার আগে ১৯৫৬-র নভেম্বরে ব্রিটিশ এমপি-রা শনিবারের একটি অধিবেশন ডেকেছিলেন সুয়েজ় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার জন্য।
১৯৪৯-এর জুলাইয়েও একটি সুপার স্যাটারডে অধিবেশন বসেছিল বাণিজ্যিক জট থেকে বেরোনোর দিশা খুঁজতে। আর প্রথম সুপার স্যাটারডে অধিবেশন হয় ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, যার পরের দিন জার্মানির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষণা করেছিন ব্রিটেন।
সুপার স্যাটারডের এই ঐতিহাসিক তাৎপর্য থেকে স্পষ্ট, ব্রেক্সিটকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট।