মাওবাদী ‘গুরু’ অরবিন্দন বালকৃষ্ণণ। সঙ্গে অনুগামী।
এক রকমের ‘হারেম’ চালাতেন ব্রিটেনের কট্টর মাওবাদী নেতা? তাঁর ‘হারেম’ ভরা থাকত তাঁরই অনুগামী, শিষ্যায়?
তাঁর মাওবাদী আদর্শের মোহে, তত্ত্বের কচকচিতে ভুলে যাঁরা এক দিন তাঁর ‘পথের পথিক’ হয়েছিলেন, সেই অনুগামী ‘শিষ্যা’দের তিনি দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছেন। তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন। কট্টর মাওবাদী নেতার ‘আধিপত্যবাদ’ থেকে রেহাই মেলেনি তাঁর কন্যারও। যাকে তিনি বছরের পর বছর একটা ঘরে আটকে রেখেছেন। তাকে মারধর করেছেন। তাকে পড়াশোনা শেখাননি। স্কুলে পড়তে যেতে দেননি। বাইরে বেরোতে দেননি। লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করতে দেননি।
৭৫ বছরের ওই কট্টর মাওবাদী নেতা অরবিন্দন বালকৃষ্ণণের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে লন্ডনের সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে। আদতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত, বেঁটেখাটো চেহারার চশম পরা সত্তরোর্ধ বালকৃষ্ণণের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, শিশু-নিগ্রহ, বেআইনি ভাবে শিশুকে আটকে রাখা সহ কম করে ১৬টি অভিযোগ রয়েছে।
সত্তরের দশকে দক্ষিণ লন্ডনে ‘ওয়ার্কার্স লিগ’ নামে একটি কমিউনিস্ট দলের তিনিই ছিলেন মাথা। ওই সময় ব্রিটেনকে তিনি বলতেন ‘ফ্যাসিস্ট দেশ’। বিশ্ব-বিপ্লব নিয়ে গরম গরম ভাষণ দিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন।
তাঁর মামলার শুনানিতে প্রসিকিউটর রোজিনা কটেজ বলেছেন, ‘‘এই মানুষটি মহিলাদের ওপর আধিপত্য বজায় রাখতে ভালবাসেন। সব সময়েই মহিলাদের তাঁর নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান। তার জন্য তাঁর মহিলা অনুগামীদের শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহ করেন। ধর্ষণ করেন। ‘হারেমে’র মতো তাঁর মহিলা অনুগামীদের একই জায়গায় রাখতে ভালবাসেন। তাঁর মেয়েও রেহাই পায় না। যে মহিলা অনুগামীদের তিনি ধর্ষণ করেছেন, তাঁদের মধ্যেই কোনও এক জনের গর্ভজাত তাঁর মেয়ে। কিন্ত বালকৃষ্ণণ তাঁর মেয়েকে তার মায়ের পরিচয় এখনও জানাননি। এখন সেই মেয়ের বয়স ৩০ বছর। ছোটবেলা থেকেই তাকে একটি বাড়িতে আটকে রেখেছেন বালকৃষ্ণণ। তাকে স্কুলে যেতে দেননি। মারধর করেছেন।’’
প্রসিকিউটর কটেজ আরও জানিয়েছেন, ‘‘একেবারে আজব কেতায় দক্ষিণ লন্ডনে ওই কমিউনিস্ট পার্টি চালাতেন মাওবাদী নেতা বালকৃষ্ণণ। ওই দলের সব পুরুষকেই তিনি তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। গোটা দলটা চালাতেন মহিলাদের দিয়ে। আর সেই মহিলা ‘কমরেড’দের একটা বাড়িতে বন্দি করে রাখতেন বালকৃষ্ণণ। আর তাঁদের ওপর নির্যাতন চালাতেন। ধর্ষণ করতেন দিনের পর দিন। মহিলা অনুগামীদের বন্দি করে রাখার অজুহাতও দিতেন বালকৃষ্ণণ। বলতেন, বাড়ির দরজা খুলে দিলে ফ্যাসিস্টরা ঢুকে পড়বে।’’
সেই ‘জেল-বাড়ি’র দরজা খুলেছে। মাওবাদী নেতার মহিলা অনুগামীরা মামলা দায়ের করেছেন।
‘ফ্যাসিস্ট’ মাওবাদী নেতাকে সশরীরে হাজির করাতে বলেছে আদালত!