প্রতীকী ছবি।
ফাইজ়ার-বায়োএনটেক, তার পরে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা, এ বারে আমেরিকান সংস্থা মডার্না। করোনার টিকা-প্রস্তুতকারী তৃতীয় সংস্থাকে জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র দিল ব্রিটেন। মোট ১ কোটি ৭০ লক্ষ ডোজ় কেনার আবেদন জানানো হয়েছে।
বিশ্বে সর্বপ্রথম টিকাকরণ শুরু হয়েছে ব্রিটেনে। এ পর্যন্ত ১৫ লক্ষ মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে বয়স্ক, কঠিন রোগে আক্রান্ত ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ ভাবে দেশের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় (হাই-প্রায়োরিটি) থাকা ৩ কোটি বাসিন্দাকে ন’টি দলে ভাগ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কথায়, ‘‘আমাদের লক্ষ্য হল,
মাঝ-ফেব্রুয়ারির মধ্যে অন্তত দেড় কোটি বাসিন্দাকে টিকা দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ করা।’’ মডার্নাকে ছাড়পত্র দেওয়ায় সেই লক্ষ্যপূরণ আরও সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, ‘‘আবার একটা ভাল খবর। ভাইরাস মোকাবিলায় আরও একটা অস্ত্র এল আমাদের হাতে।’’
প্রথমে শুধু মডার্নার টিকার ৭০ লক্ষ ডোজ় অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। আজ ছাড়পত্র দেওয়ার পাশাপাশি ডোজ় কেনার আবেদন বাড়িয়ে ১ কোটি ৭০ লক্ষ করা হয়েছে। তিনটি সংস্থা থেকে মোট ৩৬ কোটি ৭০ লক্ষ ডোজ় কেনার আবেদন জানিয়ে রেখেছে ব্রিটেন। উল্লেখ্য, ব্রিটেনের জনসংখ্যা ৬.৬ কোটি।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে এসেছে ব্রিটেন। তাদের মতো ইইউ-ও নিজেদের ‘অস্ত্রাগার’ মজবুত করছে। আজ ফাইজ়ার-বায়োএনটেকের
সঙ্গে কোভিড টিকার অতিরিক্ত ৩০ কোটি ডোজ় কেনার চুক্তি সারলো ইইউ। আগের অর্ডারের দ্বিগুণ। ইইউ প্রধান উরসুলা ফন ডের লেয়েন বলেন, ‘‘ইউরোপীয়রা প্রত্যেকে যাতে নিরাপদ ও কার্যকরী করোনা প্রতিষেধক পান, সেটাই নিশ্চিত করছি আমরা।’’
আজ একটি গবেষণা রিপোর্ট পেশ করে আমেরিকান সংস্থা ফাইজ়ার দাবি করেছে, নয়া ব্রিটেন-স্ট্রেনের বিরুদ্ধেও যথেষ্ট কার্যকর তাদের কোভিড টিকা। ‘টেক্সাস মেডিক্যাল ব্রাঞ্চ’-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পরীক্ষা করেছিল ফাইজ়ার। রিপোর্টে তারা দাবি করেছে, ল্যাবে নয়া স্ট্রেনটিকে (যাতে স্পাইক প্রোটিনে এন৫০১ওয়াই মিউটেশন ঘটেছে) নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে তাদের প্রতিষেধক। তবে গবেষণাপত্রটি এখনও কোনও জার্নালে প্রকাশিত হয়নি বলে জানিয়েছে ফাইজ়ার।
আমেরিকা বা ব্রিটেন নিজেদের তৈরি টিকায় আত্মবিশ্বাসী হলেও, তাদের উপরে ভরসা নেই ইরানের। পশ্চিমের তৈরি করোনা-টিকা ‘বয়কটের’ ডাক দিলেন ইরানের সর্বোচ্চ শাসক আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। তিনি জানান, পশ্চিমের কোনও দেশের তৈরি প্রতিষেধকে তাঁর ভরসা নেই। কোনও ভাবেই যাতে সেগুলি দেশে ঢুকতে না-পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে নির্দেশিকা জারি করেছেন তিনি।
সরকারি টেলিভিশনে খামেনেই বলেন, ‘‘আমেরিকা, ব্রিটেন, এমনকি ফ্রান্স থেকেও ভ্যাকসিন আমদানি করা উচিত নয় আমাদের। ওদের বিশ্বাস করি না।’’ ইরান আগেও জানিয়েছে, করোনা-যুদ্ধে তাদের সব চেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি ইরানের বিদেশমন্ত্রী জাভেদ জ়ারিফ অভিযোগ করেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র ‘কোভ্যাক্স’ প্রকল্পে তাদের যোগ দিতে বারবার বাধা দিয়েছে আমেরিকা। পৃথিবীর সব প্রান্তে যাতে প্রতিষেধক পৌঁছে যায় এবং সমবণ্টন হয়, সেই উদ্দেশে ‘কোভ্যাক্স’ প্রকল্প গঠন করেছে হু। জ়ারিফ বলেন, ‘‘কোভ্যাক্সে আমাদের অর্থ বিনিয়োগেও বাধা দিয়েছে আমেরিকা।’’