প্রীতি পটেল।
সকলের জন্য আর দরজা খোলা রাখবে না ব্রিটেন। শুধু ‘দক্ষ ও সেরা’রাই বরিস জনসনের দেশে কাজের ভিসা পাবেন।
আগামী বছর থেকে ব্রিটেনে পয়েন্টভিত্তিক কাজের ভিসা পদ্ধতি চালু হবে বলে আজ জানিয়েছেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি পটেল। তাঁর কথায়, ‘‘সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এবং শ্রেষ্ঠরাই ব্রিটেনে এসে কাজের সুযোগ পাবেন।’’ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কর্মদক্ষতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বেতন এবং কী কাজ করতে চান— তার ভিত্তিতেই পয়েন্ট নির্ধারিত হবে। আর সেই নিরিখেই দেওয়া হবে কাজের ভিসা। এই ভিসার জন্য ইংরেজি বলার দক্ষতা আবশ্যিক হবে বলে জানিয়েছেন প্রীতি। বিরোধী লেবার পার্টির বক্তব্য, নতুন ভিসা-নীতির জন্য তৈরি হওয়া ‘প্রতিকূল পরিস্থিতি’তে শ্রমিক পাওয়া কঠিন হবে। লিবারাল ডেমোক্র্যাটদের মতে, বিদেশিদের সম্পর্কে অহেতু ভয় থেকেই সরকারের এমন সিদ্ধান্ত।
গত ৩১ জানুয়ারি প্রাথমিক ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়েছে ব্রিটেন। এক বছর চলবে ‘ট্রানজ়িশন পিরিয়ড’ বা মধ্যবর্তী পর্যায়। ২০২১-এর ৩১ জানুয়ারি পাকাপাকি ভাবে ইইউ ছাড়বে ব্রিটেন। তার ঠিক আগে, ২০২১-র ১ জানুয়ারি থেকে এই নতুন কাজের ভিসা নীতি চালু হবে। প্রীতি জানান, ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে ইইউ ও ইইউয়ের বাইরের দেশগুলির ক্ষেত্রে পয়েন্টভিত্তিক ভিসা সমান ভাবে প্রযোজ্য হবে। এবং কম দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীরা আর কাজের ভিসা পাবেন না। পয়েন্টভিত্তিক ভিসা পদ্ধতি নিয়ে প্রীতি বলেছেন, ‘‘গোটা দেশের কাছে আজকের দিনটা ঐতিহাসিক। আমরা গোটা দুনিয়া থেকে সবচেয়ে ভাল, উজ্জ্বল মেধাবী লোকজনকে ডাকব। এতে চাঙ্গা হবে আমাদের অর্থনীতি, আমাদের সম্প্রদায়। দেশের পূর্ণ ক্ষমতার সদ্ব্যবহার হবে।’’
এই ঘোষণার পরে একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে বসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক প্রীতিকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনার মা-বাবা তো ১৯৬০-এর দশকে উগান্ডা থেকে এ দেশে এসেছিলেন। আপনার কি মনে হয়, তাঁরা এই নতুন অভিবাসন নীতিতে ভিসা পেতেন?’’ প্রথমে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও নাছোড় সঞ্চালককে শেষ পর্যন্ত উত্তর দেন প্রীতি। বলেন, ‘‘সম্ভবত পেতেন না। কিন্তু মনে রাখবেন, শরণার্থীদের জন্য আমাদের নীতি সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে কোনও দক্ষতার মাপকাঠি নেই।’’ প্রীতির মা-বাবা উগান্ডা ছেড়ে আসার পরেই সে দেশের শাসক ইডি আমিন এশীয় বংশোদ্ভূতদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। শরণার্থী হয়ে তাঁরা ছড়িয়ে পড়েন নানা দেশে।
নয়া পয়েন্টভিত্তিক ভিসা শ্রমিক-সঙ্কট তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা। যদিও সরকারের বক্তব্য, নিয়োগকারীরা যেন অভিবাসন নীতির উপর ভরসা করে না-থাকেন। তাঁরা যেন কর্মী ধরে রাখা এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উপরেই মনোনিবেশ করেন। সরকারের মতে, কর্মী সংখ্যা না-বাড়িয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে ৩২ লক্ষ নাগরিক ব্রিটেনে থাকার অনুমতি চেয়েছেন, তাঁদের দিয়েই শ্রমিকের চাহিদা মেটানো হোক।