আসিয়া ইসলাম
ব্রিটেনে অনির্দিষ্ট কাল থাকার অনুমতি পাওয়া যায় যে আইএলআর (ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেন) ভিসার মাধ্যমে, গত দেড় বছরে তার কড়াকড়িতে পেশাগত সমস্যায় পড়ছেন অসংখ্য উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভারতীয়। সেই লম্বা তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আসিয়া ইসলাম। তাঁর আইএলআর ভিসার আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে আড়াইশোরও বেশি শিক্ষাবিদ ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি লিখে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানিয়েছেন।
ঠিক যেমন গত বছর কয়েকশো ভারতীয়ের আইএলআর ভিসার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন বিভিন্ন পেশার তিরিশ হাজারেরও বেশি অনাবাসী ভারতীয়। তখন বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। কিন্তু কনজ়ারভেটিভ দলের আনা আইনের ফলে ভারত-সহ উপমহাদেশের অভিবাসীদের যে এই ভিসা পাওয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে, তা ফের দেখিয়ে দিল সমাজতত্ত্ববিদ আসিয়ার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের ঘটনাটি।
৩১ বছর বয়সি আসিয়ার জন্ম ও প্রাথমিক পড়াশোনা উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য প্রায় এক দশকেরও বেশি তিনি ব্রিটেনে রয়েছেন। লন্ডনের স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাওয়ার পরে নিউন্যাম কলেজ থেকে পিএইচডির জন্য গবেষণা করেছেন আসিয়া। পেয়েছেন অত্যন্ত সম্মানের ‘গেটস স্কলারশিপ’ও। এখন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট-ডক্টরাল গবেষক তিনি।
আসিয়াকে ভিসা না-দেওয়ার কারণ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ের থেকে অনেক বেশি দিন তিনি ব্রিটেনের বাইরে (আসিয়ার ক্ষেত্রে ভারতে) কাটিয়েছিলেন। তাই তাঁকে এই বিশেষ ভিসা দেওয়া যাচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, দশ বছরে ৫৪০ দিনের বেশি ব্রিটেনের বাইরে থাকলে এই ভিসার আবেদন সাধারণত মঞ্জুর করা হয় না। ২০১৭-১৮ সালের অনেকটাই ভারতে ছিলেন আসিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘আপনি খুব কম দিনই এ দেশে ছিলেন। ফলে ফিরে গিয়ে ভারতীয় জীবনযাপনে খাপ খাইয়ে নিতে আপনার অসুবিধে হবে বলে মনে হয় না। তা ছাড়া, বর্তমান যুগে বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সংযোগ মাধ্যমের ফলে এ দেশে তৈরি হওয়া বন্ধুত্ব সহজেই টিকিয়ে রাখতে পারবেন আপনি।’’
মন্ত্রকের এই চিঠিতে যারপরনাই আশ্চর্য আসিয়া বলেন, ‘‘আমি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার কাজে দিল্লি গিয়েছিলাম। ব্রিটেনের অন্যতম খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে কাজটা করছি। তার পরেও ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যদি থাকার কারণ বিশ্লেষণ না-করে, শুধু দিনের হিসেবে ভিসা বাতিল করে দেয়, তা হলে বহির্বিশ্বের কাছে এই বার্তাই যাবে যে বিদেশি গবেষকদের চায় না ব্রিটেন!’’ আসিয়ার ভিসা আবেদন পুনর্বিবেচনার দাবিতে মন্ত্রককে চিঠি লিখেছেন যে ৩০০-রও বেশি শিক্ষাবিদ, তাঁদের মধ্যে অন্যতম নিউন্যাম কলেজের অধ্যক্ষ অ্যালিসন রোজ়ের কথায়, ‘‘এই সিদ্ধান্ত খুবই দুশ্চিন্তার। আজকের তরুণ গবেষকেরাই তো আগামী দিনে এ দেশের শিক্ষার মেরুদণ্ড।’’