ভারতীয়দের জন্যও ধাক্কা
UK Visa Policy

নয়া ভিসা আইন ঘোষণা ব্রিটেনের

প্রধানমন্ত্রী সুনক নিজেই এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘অভিবাসন খুব বেড়ে গিয়েছে। আমরা তা কমানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ ঘোষণা করছি। অভিবাসন যাতে ব্রিটেনের উপকারে লাগে, সেটা নিশ্চিত করা হবে।’’

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৪৬
Share:

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। —ফাইল চিত্র।

ব্রিটেনে ঋষি সুনকের সরকার আগামী বছর থেকে যে নতুন ভিসা আইন কার্যকর করতে চলেছে, তাতে ধাক্কা খাবেন ভারতীয়রাও। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি গত কাল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নতুন পাঁচ দফা ভিসা আইনবিধির কথা ঘোষণা করেছেন, অভিবাসনের হার কমানোই যার প্রধান উদ্দেশ্য। এই নতুন আইনে ব্রিটিশ সংস্থাগুলি ভিনদেশি কর্মী নিয়োগে কড়া বিধিনিষেধের মুখে পড়বে, সেই সঙ্গে বিদেশি জীবনসঙ্গীকে ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে উঠবে।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী সুনক নিজেই গত কাল এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘অভিবাসন খুব বেড়ে গিয়েছে। আমরা আজ তা কমানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ ঘোষণা করছি। অভিবাসন যাতে ব্রিটেনের উপকারে লাগে, সেটা নিশ্চিত করা হবে।’’ আর একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘‘আমরা অভিবাসনের গতি রুখতে সবচেয়ে বড় কাটছাঁট ঘোষণা করলাম। এর আগে কোনও প্রধানমন্ত্রী এটা করেননি। এই বদলটা দরকার ছিল, আমি এটা করবই।’’

কেমন এই কাটছাঁট? সুনকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেভারলি যে পাঁচ দফা আইনবিধির কথা ঘোষণা করেছেন, তার সবচেয়ে বড় দিক হল কাজের জন্য ভিসাপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বেতনের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে দেওয়া। এত দিন পর্যন্ত ব্রিটেনে কাজের ভিসা পেতে গেলে বার্ষিক ন্যূনতম বেতন হতে হত ২৬২০০ পাউন্ড। ২০১২ সাল থেকে এই শর্তে বদল হয়নি। এখন নয়া বিধিতে আগামী এপ্রিল থেকে ভিসাযোগ্য বেতন হবে বছরে ৩৮৭০০ পাউন্ড। অর্থাৎ কম বেতনের কাজ নিয়ে ব্রিটেনে যাওয়ার রাস্তা আর খোলা থাকবে না। বহু ভারতীয় যে ব্রিটিশ রেস্তরাঁগুলিতে বা আতিথ্য (হসপিটালিটি) পরিষেবায় ছোট থেকে মাঝারি পদের কাজ নিয়ে ব্রিটেন যেতেন, সেই সুযোগ আর থাকবে না। স্বাস্থ্য এবং পরিচর্যা (কেয়ার) পরিষেবার ক্ষেত্রকে অবশ্য এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হয়েছে।কিন্তু সেখানেও নতুন আইন স্পষ্ট বলছে, জীবনসঙ্গী বা পরিবারের অন্য কোনও সদস্যকে মোটেই সঙ্গে আনা যাবে না। সে ক্ষেত্রে পরিচর্যা পরিষেবার কাজ নেওয়ার ক্ষেত্রেও ভারত-সহ ভিন্‌দেশিদের অনেকেই সমস্যায় পড়বেন।

Advertisement

শুধু ভিন্‌দেশিদের ক্ষেত্রেই যে জীবনসঙ্গীকে সঙ্গে নেওয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি বসছে, তা নয়। কোনও ব্রিটিশ নাগরিক যদি কোনও ভিন্‌দেশিকে বিয়ে করেন এবং তাঁকে ব্রিটেনে আনতে চান, সে ক্ষেত্রে তাঁকেও বার্ষিক ন্যূনতম আয়ের শর্ত পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ বছরে ৩৮৭০০ পাউন্ড রোজগার না করে কোনও ব্রিটিশ নাগরিক তাঁর জীবনসঙ্গীকে ব্রিটেনে নিয়ে আসতে পারবেন না। এত দিন এই আয়ের শর্ত ছিল বছরে ১৮০০০ পাউন্ড।

ভিন্‌দেশি পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে পরিবারকে সঙ্গে আনার সুযোগে আগেই কোপ পড়েছিল। এ বার বলা হয়েছে যে, গবেষণার মতো উচ্চশিক্ষার জন্য আসা পড়ুয়ারা ছাড়া ভিন্‌দেশি পড়ুয়ারা তাঁদের জীবনসঙ্গীকে এ দেশে আনতে পারবেন না। তা ছাড়া, পড়ুয়াদের ভিসায় স্নাতক পাঠক্রম শেষ হওয়ার পরেও কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা ছাড়াই যে দু’বছর পর্যন্ত ব্রিটেনে থাকা যেত, সেটাও পুনর্বিবেচনা করা হবে।

আরও একটি দিক থেকে ভিন্‌দেশি কর্মীরা ধাক্কা খেতে চলেছেন, যার মধ্যে পড়বেন বহু ভারতীয়। কর্মীর ঘাটতি রয়েছে এমন পেশার তালিকা নতুন করে তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন ক্লেভারলি। এত দিন ঘাটতি-তালিকায় থাকা পেশায় ২০ শতাংশ কম বেতনে ভিন্‌দেশি কর্মী নিয়োগ করা যেত। সেই সুযোগ নতুন আইনে থাকছে না।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন, তিনি অভিবাসনের নেট হার, অর্থাৎ মোট সংখ্যা কমাতে চান। গত বছরের অভিবাসী সংখ্যার যে হিসেব এ বছর জুনে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ৭ লক্ষ ৪৫ হাজার অভিবাসী এক বছরে ব্রিটেনে এসেছেন। ক্লেভারলি দাবি করেছেন, নতুন পাঁচ আইনে এই সংখ্যাটা অন্তত ৩ লক্ষ কমে যাবে। অভিবাসনের তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা মাইগ্রেশন অবজ়ারভেটরির তরফে ম্যাডেলিন সাম্পশন বলছেন, এই নতুন আইন নানা দিক থেকেই দূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। ভারতীয়দের একটা বড় অংশ তার আওতায় আসবেন।

ম্যাডেলিনের মতে, প্রথমত যে সব ভারতীয় ছোট থেকে মাঝারি কাজ নিয়ে ব্রিটেনে গিয়েছেন এবং ভারতীয় মেয়ে বিয়ে করে সংসার পাতার স্বপ্ন দেখেন, তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নির্দিষ্ট বেতনহার পূরণ করতে না পারলে তাঁরা ব্রিটেনের বাইরে বিয়ে করতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত রেস্তরাঁ শিল্প, বিশেষত ভারতীয় রেস্তরাঁগুলি বহুলাংশে সমস্যায় পড়বে। চড়া বেতন দিতে অপারগ হওয়ায় তারা ভারতের রাঁধুনি বা কসাই নিয়োগ করতে পারবে না। তৃতীয়ত ব্রিটেনের স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা পরিষেবায় বহু ভারতীয় কাজ করেন। তাঁদের ক্ষেত্রে বেতনের কড়াকড়ি না থাকলেও পরিবার নিয়ে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। অনেকেই একা যাওয়ার শর্তে রাজি হতে পারবেন না। যদি রাজি হন, সে ক্ষেত্রেও পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ বিচ্ছেদ তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলবে। কাজের জায়গায় নানা বৈষম্যকে মানিয়ে চলার যে মানসিক শক্তি তাঁরা ঘরে জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে আহরণ করতেন, সেটা আর পারবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement