Bangladesh Unrest

কোটা সংস্কার আন্দোলনের দুই ‘মুখ’, সেই নাহিদ এবং সজীব এ বার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্য

নাহিদ এবং সজীব, দু’জনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দু’জনের বয়সই ২৬ বছর। নাহিদ সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র। তাঁর জন্ম ঢাকায়। বাবা শিক্ষক ছিলেন। সজীব ভাষা বিজ্ঞানের ছাত্র। তাঁর জন্ম কুমিল্লায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৪ ২১:৫৭
Share:

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শপথগ্রহন অনুষ্ঠান। ছবি: পিটিআই।

বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে পথে নেমেছিলেন। আটকও করেছিল পুলিশ। কিন্তু আন্দোলন থামাননি তাঁরা। পাল্টা শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকে আরও জোরালো করে তুলেছিলেন। তাঁরা ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সমন্বয়ক। এ বার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হলেন সেই নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। বৃহস্পতিবার শপথ নিয়েছেন তাঁরা। নাহিদ পেয়েছেন ডাক মন্ত্রক, টেলি যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক। সজীব পেয়েছেন যুব এবং ক্রীড়া মন্ত্রক।

Advertisement

নাহিদ এবং সজীব, দু’জনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দু’জনের বয়সই ২৬ বছর। নাহিদ সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র। তাঁর জন্ম ঢাকায়। বাবা শিক্ষক ছিলেন। সজীব ভাষা বিজ্ঞানের ছাত্র। তাঁর জন্ম কুমিল্লায়।

গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশে পথে নামেন পড়ুয়ারা। সেই আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠেন ২৬ বছরের নাহিদ। ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্যতম সমন্বয়ক তিনি। আন্দোলন যখন জোরালো হয়, সেই সময়ে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন সজীব। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যখন উত্তাল বাংলাদেশ, দেশে কার্ফু জারি করেছে শেখ হাসিনার সরকার, সেই সময় নাহিদ এবং সজীবকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে। যদিও পুলিশ-প্রশাসন এই অভিযোগ মানেনি।

Advertisement

নাহিদ দাবি করেছিলেন, ১৯ জুলাই সবুজবাগে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে তাঁকে ‘অপহরণ’ করেন ২৫ জন। তাঁর দাবি, ‘অপহরণকারী’রা ছিলেন ‘রাষ্ট্রীয় বাহিনী’র সদস্য। তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় ‘অপহরণকারী’রা সাধারণ পোশাকে ছিলেন বলে নাহিদ দাবি করেছিলেন। তাঁর হাত, চোখ বেঁধে অত্যাচার চালানো হয়েছিল বলেও অভিযোগ। ‘অপহরণকারী’রা তাঁকে বার বার কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন বলে নাহিদ দাবি করেন।

নাহিদের ‘অপহরণ’-এর খবর আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল আন্দোলনকারীদের মধ্যে। রাতারাতি তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। নাহিদকে নেতা মেনে বাংলাদেশে তখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। তার দু’দিন পর পূর্বাচলের কাছে একটি সেতু থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় আহত নাহিদকে। ভর্তি করানো হয় ঢাকার এক হাসপাতালে। পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, নাহিদকে ‘অপহরণ’-এর বিষয়ে তারা কিছু জানে না।

সজীব দাবি করেন, তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে বিশেষ ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল। তিনিও অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন শেখ হাসিনার প্রশাসনের দিকে। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পর নাহিদ এবং সজীব, দু’জনকেই ভর্তি করানো হয়েছিল একটি হাসপাতালে। অভিযোগ, সেখান থেকে তাঁদের আবার আটক করা হয়। সেই সঙ্গে আর তিন সমন্বয়ককেও আটক করার অভিযোগ ওঠে। নাহিদ অভিযোগ করেন, ‘বন্দি’ অবস্থায় তাঁকে আন্দোলন প্রত্যাহারের বার্তা দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। বাধ্য হয়ে তিনি সেই বার্তা দিয়েছিলেন।

যদিও আন্দোলন তাতে থামেনি। ২১ জুলাই বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কোটা সংস্কার মামলার রায় দেয়। তার পরেও থামেনি আন্দোলন। নাহিদ এবং সজীবকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার পরে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। সামনের সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন সেই নাহিদ। তিনি শেখ হাসিনার সরকারকে ‘সন্ত্রাসী’ বলেন। ছিলেন সজীবও। ধৃত আন্দোলনকারীদের মুক্তি, সমস্ত মামলা প্রত্যাহার, কোটা আন্দোলনের উপর হামলা চালিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের শাস্তি-সহ আরও বিভিন্ন দাবি ছিল আন্দোলনকারী ছাত্রদের।

এই আন্দোলনের জেরে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হন হাসিনা। ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সদস্যদের দাবি মেনেই সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। তার পরেও আন্দোলনের ময়দান ছাড়েননি নাহিদ এবং সজীবেরা। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পড়ুয়াদের দাবি মেনে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে। সেই সরকারের মাথায় থাকবেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। সেনা-সমর্থিত বা রাষ্ট্রপতি শাসিত কোনও সরকারকে সমর্থন করা হবে না। তাঁদের প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া অন্য কোনও সরকারকে সমর্থন করা হবে না বলেও জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত সেই দাবিও মেনে নেন দেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান এবং রাষ্ট্রপতি শফিউদ্দিন। বৃহস্পতিবার রাতে ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় নতুন সরকার। সেখানেই দায়িত্ব পেয়েছেন দুই ছাত্রনেতা।

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর গণভবনে ঢুকে পড়েন আন্দোলনকারীরা। চলে ভাঙচুর, লুটপাট। সরকারি দফতর, থানা লুটেরও অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠে, দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ধর্মস্থানে হামলার। তখনও এগিয়ে আসেন এই নাহিদ এবং সজীব। সমাজমাধ্যমে একের পর এক ভিডিয়ো পোস্ট করেন তাঁরা। কখনও জনগণকে শান্ত থাকার আর্জি জানান। কখনও সংখ্যালঘুদের রক্ষার কথা বলেন। বৃহস্পতিবার মন্ত্রকের দায়িত্ব পাওয়ার পরেও একই রকম সচেতন দুই ছাত্রনেতা। সমাজমাধ্যমে সকলকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নাহিদ। নিরাপত্তার কারণে গত কয়েক দিন যোগাযোগবিচ্ছিন্ন ছিলেন। পোস্টের শেষে তিনি লিখেছেন, ‘‘আপনাদের সকল ধরনের আলোচনা, সমালোচনা ও পরামর্শ আমাদের পাথেয় হবে৷’’ সজীব আবার আরও স্পষ্ট বার্তা দিয়ে লিখেছেন, ‘‘ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার ও তদ্বির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে আমার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশ গঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement