জ্যাক মেরিট ও সাসকিয়া জোন্স
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রতি ক্ষোভে ফেটে পড়লেন লন্ডন ব্রিজ হামলায় নিহত জ্যাক মেরিটের বাবা ডেভিড মেরিট। তাঁর অভিযোগ, ছেলের মৃত্যুকে নিয়ে ‘রাজনীতি’ শুরু করেছেন বরিস জনসন।
শুক্রবারের ওই জঙ্গি হামলা নিয়ে সে দিন থেকেই রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়ে গিয়েছিল। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গত বছর অক্টোবর মাসে লন্ডনের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল দাগি পাকিস্তানি জঙ্গি উসমান খানকে। শুক্রবার লন্ডন ব্রিজে ছুরি নিয়ে হামলা চালায় সে। আইন মেনেই উসমানকে ছাড়া হয়েছিল। ব্রিটেনের অপরাধ আইনে সাজার মেয়াদ অর্ধেক শেষ হওয়ার পরে বন্দিকে ‘রিলিজ় অন লাইসেন্স’ বা শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীকে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে এই আইন আনা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে অপরাধীর উপরে নজরদারি অবশ্য বন্ধ হয় না। ‘মনিটরিং ট্যাগ’ পরিয়ে ২৪ ঘণ্টা নজরে রাখা হয়। উসমানকেও এ ভাবেই জেল থেকে ছাড়া হয়েছিল।
এই আইন পাশ হয়েছিল লেবার পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালীন। শুক্রবারের ঘটনার পর থেকেই বরিস জনসন ওই আইন ও লেবার পার্টিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। জনসন অবশ্য সরাসরি লেবার পার্টিকে দায়ী করেননি, কিন্তু ঘুরিয়ে যা বলেছেন তাতে বিষয়টি স্পষ্ট। কিছু দৈনিকও সমর্থন জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এই তত্ত্বকে। তাদের সংবাদ শিরোনামে দেখা গিয়েছে, ‘মুক্ত জিহাদিদের বিরুদ্ধে বরিস-ঝড় শুরু’। বিরোধীরা অবশ্য এক কথায় ছেড়ে দেননি। তাঁদের বক্তব্য, কনজ়ারভেটিভরা গত দশ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। তাঁদের আমলেই উসমান খানকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং নজরে রাখা হয়নি।
এই রাজনৈতিক চাপান-উতোরে ক্ষুব্ধ জ্যাক মেরিটের বাবা। বরিস জনসনকে বিঁধে তিনি টুইট করেছেন, ‘‘আপনাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য আমার ছেলে আর ওঁর সহকর্মীর মৃত্যুকে এ ভাবে ব্যবহার করবেন না। আপনারা যে ধরনের মতাদর্শে বিশ্বাস করেন— ঘৃণা, বৈষম্য, উপেক্ষা, আমার ছেলে তার বিরোধী ছিল।’’ ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সেই টুইট। অনেকেই সমর্থন জানিয়েছেন ডেভিডকে।
গত কাল একটি ব্রিটিশ চ্যানেলে অ্যান্ড্রু মারের শোয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সঞ্চালক তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, উসমানকে ইলেকট্রনিক ট্যাগ পরানো থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গেল সে? তা হলে কি বন্দিদের সংস্কার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে? কিন্তু জনসন সরাসরি আগের লেবার পার্টির সরকার ও তাদের আনা আইনের উপরে দায় চাপিয়ে প্রশাসনিক অব্যবস্থার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান। বলেন, ‘‘শীঘ্রই জেল থেকে মুক্ত জঙ্গিদের ফের জেলে ঢোকানো হবে।’’
বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকেনি লেবার পার্টি। তাদের দলের সদস্যা শমি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দুম করে না ভেবেচিন্তে এ ধরনের মন্তব্য করা একেবারেই উচিত নয়।’’ তাঁর বক্তব্য, কনজ়ারভেটিভরা ক্ষমতায় আসার পরে পুলিশ বাহিনী কমিয়ে দিয়েছে। ফলে প্যারোলে মুক্তি পাওয়া বন্দিদের মনিটরিং ট্যাগ পরানো থাকলেও নজরদারি চালানো হয় না। শমির কথায়, এই কারণেই উসমানের সঙ্গে জেল থেকে ছাড়া পাওয়া বাকি জঙ্গিদের ট্যাগ পরানো থাকলেও তারা কে, কোথায় আছে, প্রশাসন জানে না।
এই ‘দায় চাপানোর খেলা’ মেনে নিতে পারছেন না ডেভিড মেরিট। তাঁর ছেলে চিরকালই অপরাধীদের সংশোধনের উপরে জোর দিয়েছেন। শুক্রবার লন্ডন ব্রিজের উত্তর দিকে ফিশমঙ্গার’স হলে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের একটি সেমিনার চলছিল। বন্দিদের পুনর্বাসন ও সমাজের মূলস্রোতে ফেরানো নিয়ে ওই সেমিনারের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন ২৫ বছরের জ্যাক ও ২৩ বছর বয়সি সাসকিয়া জোন্স। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক দু’জনেই। অপরাধীদের সংশোধন নিয়ে কাজ করতেন দু’জনেই। সেখানে ছেলের এ ভাবে মৃত্যু ও তা নিয়ে পরবর্তী রাজনৈতিক টানাপড়েনে ক্ষুব্ধ ডেভিড। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ছেলে
বেঁচে থাকলে কখনওই এই আইনের উপরে দায় চাপাত না। ও বরাবরই বন্দিদের সুস্থ জীবন দেওয়ার পক্ষে ছিল।’’