গুপ্তধনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বরাবরই। আর সেই গুপ্তধন যদি হয় হিটলারের নাৎসি বাহিনীর লুট করা? তবে তা নিয়ে আগ্রহ বাড়তে বাধ্য। গুপ্তধন অনুসন্ধানকারী দল এ বার উত্তর-পূর্ব পোল্যান্ডে এক গাছের নীচে খুঁজে পেলেন এমন এক রহস্যময় সুড়ঙ্গের দরজা(হ্যাচ) যা প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে সেই ‘অ্যাম্বার রুম’এর দরজা।
কী এই অ্যাম্বার রুম? অষ্টাদশ শতকে রাশিয়ার রাজা পিটার দ্য গ্রেট-এর সময় বানানো হয়েছিল এই ‘অ্যাম্বার রুম’।
মনে করা হয় ১৭১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রুশিয়ার রাজা ফ্রেডরিক উইলহেম প্রথম পিটার দ্য গ্রেট-এর রাজপ্রাসাদ পরিদর্শনের সময় খুশি হয়ে তাঁকে এই সুসজ্জিত, মনিমুক্ত খচিত ঘরটি উপহার স্বরূপ দেন।
রত্ন শোভিত, চারিদিকে আয়না লাগানো চোখ ধাঁধানো এই ঘরটি বানাতে নাকি সময় লেগেছিল প্রায় দশ বছর। খরচ হয়েছিল এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
১৬ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট এক লক্ষেরও বেশি অ্যাম্বার পাথর ছিল এই ঘরে। তা ছাড়াও ছিল হিরে, সোনা ও নানা ধরনের জহরত।
১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে এটিকে রাশিয়ার তৎকালীন রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ১৭ মাইল দক্ষিণে ক্যাথরিন প্যালেস-এ নিয়ে যাওয়া হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনীর হাতে ১৫-২০ লক্ষ শিশু-সহ খুন হয়েছিলেন প্রায় এক কোটি মানুষ। লুট হয়েছিল বহু ধনসম্পদ।
খোয়া যাওয়া ধনসম্পদের মধ্যে একটি হল এই অ্যাম্বার রুম। ১৯৪১ সালে জার্মানি রাশিয়া আক্রমণের সময় নাৎসি বাহিনী লুট করে এই ঘরটি।
ওয়াল পেপার দিয়ে ঢেকে রাশিয়ানরা খুব চেষ্টা করেছিলেন ঘরটি রক্ষা করতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
জার্মানরা জানতেন বাইরে থেকে সাদামাটা দেখতে এই ঘরের ভেতরে কী লুকিয়ে রয়েছে। টানা ৩৬ ঘণ্টা চেষ্টা করে তারা ঘরটি দখলে নেয় ও জার্মানিতে নিয়ে চলে আসে।
১৯৪৫ সালের জানুয়ারিতে হঠাৎই হাপিশ হয়ে যায় এই ঘরটি।
অনেকে মনে করেন যুদ্ধের সময় বোমার আঘাতে নষ্ট হয়ে যায় এটি। কারও মতে, নাৎসি বাহিনীই সুরক্ষিত জায়গায় এটিকে পাচার করে দেয়।
পোল্যান্ডে পাওয়া এই গুপ্ত সুড়ঙ্গের দরজা হয়ত এক অজানা রহস্যেরই পর্দা উন্মোচন করতে চলেছে। কী আছে ওই দরজার পিছনে? যুদ্ধে অকালে মারা যাওয়া মানুষের বুক ফাটা কান্না না অতুল ধনরাশি!