ছাই না উড়িয়েও পাওয়া যায় অমূল্য রতন। যেমন পেয়েছেন অ্যাডাম স্টেপলস এবং লিজা গ্রেস। আঙুর বাগিচায় মাটির তলা থেকে তাঁরা যা পেলেন, বলাই যায় তা সাত রাজার গুপ্তধন। বর্তমান বাজারে তার মূল্য প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। (প্রতীকী চিত্র)
মধ্যবয়সি অ্যাডাম ও স্টেপল ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারেরে বাসিন্দা। উত্তর পূর্ব সমারসেটে এক চাষির বাগানে তাঁদের অপেক্ষায় ছিল এই গুপ্তধন। তাঁরা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করছিলেন জমি। তখনই মাটির গভীরে ধরা পড়ে ধাতুর অস্তিত্ব।
খনন করে পাওয়া যায় ২৫৭১টি রুপোর মুদ্রা। ইতিহাসবিদদের ধারণা, এই মুদ্রাগুলি রাজা দ্বিতীয় হ্যারল্ড এবং উইলিয়ম দ্য কঙ্কারার-এর সমসাময়িক। তাঁরা ছিলেন ভিন্ন যুগের দুই বিজয়ী। রাজা দ্বিতীয় হ্যারল্ড ছিলেন ইংল্যান্ডের শেষ অ্যাংলো স্যাক্সন রাজা। তাঁর সঙ্গেই শেষ হয় অ্যাংলো স্যাক্সন শাসন।
এরপর নর্ম্যান অভিযান। ১০৬৬ খ্রিষ্টাব্দে সেই অভিযানের পরে সিংহাসনে বসেন উইলিয়াম। ১০৬৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইংল্যান্ডের প্রথম নর্ম্যান রাজা। এই দুই যুগের সন্ধিক্ষণের মুদ্রাই উদ্ধার করেছেন অ্যাডাম ও লিজা। মাটির অন্ধকারে থাকার প্রায় হাজার বছর পরে।
গুপ্তধন উদ্ধারের পরে নিয়ম অনুযায়ী তাঁরা যোগাযোগ করেছেন ডার্বিশায়ার কাউন্টির স্থানীয় লিয়াজঁ আধিকারিকের সঙ্গে। তারপর তা পাঠানো হয় ব্রিটিশ মিউজিয়ামে।
এই গুপ্তধন উদ্ধার হয়েছে প্রায় সাত মাস আগে। তার পর এত দিন ধরে তার মূল্যায়ন চলছে। যদি মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ একে দেশের সম্পদ বলে ঘোষণা করেন, তবে উদ্ধারকারীরা তাঁদের খননের সমমূল্য পাবেন। সেই অর্থের অর্ধেক অবশ্য দিতে হবে জমির মালিককে। অ্যাডাম-লিজা অবশ্য নিশ্চিত, খুব শীঘ্রই এই ঘোষণা হয়ে যাবে।
ইউরোপ জুড়ে এখনও আছেন গুপ্তধন সন্ধানী বা ট্রেজার হান্টাররা। অ্যাডামস ও লিজা সে রকমই গুপ্তধন শিকারি। তাঁদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন, কারণ উদ্ধার হওয়া মুদ্রাগুলি খুবই ভাল অবস্থায় রয়েছে। ফলে সংগ্রাহকের কাছে এই মুদ্রা অমূল্য।
ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া মুদ্রাগুলির মধ্যে রাজা দ্বিতীয় হ্যারল্ডের সমসাময়িক মুদ্রাগুলি অনেক বেশি মূল্যবান ও দুর্লভ। প্রাচীন রোমানরা ঈশ্বরের উদ্দেশে পুঁতে রাখতেন সম্পদ। কিন্তু মুদ্রাগবেষকদের ধারণা, এ ক্ষেত্রে তা হয়নি।
ইতিহাসবিদদের মত, ডার্বিশায়ারে উদ্ধার হওয়া মুদ্রা কোনও রাজার ছিল না। বরং ছিল সমাজের অভিজাত কোনও পরিবারের। সম্ভবত সুরক্ষার কারণে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল এই সম্পদ। কিন্তু পরে তা আর উদ্ধার হয়নি।
মুদ্রাভাণ্ডার মাটির অন্ধকারে ছিল অপেক্ষায়। দুই গুপ্তধন-শিকারির ভাগ্য ফেরাবে বলে। কার্যত সারা জীবনের উপার্জন এখন অ্যাডাম ও তাঁর সঙ্গিনী লিজার পকেটে। যা থাকার কথা ছিল মধ্যযুগীয় রাজা বা অভিজাতদের কোষাগারে। কিন্তু পথ ভুলে চলে এল একুশ শতকে।