শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
দেশের ভিতর অভ্যুত্থানে জীবন সঙ্কটে পড়তে পারেন মুজিব-কন্যা শেখ হাসিনা— গত কয়েক দশকে এমন সম্ভাবনার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থেকেছে নয়াদিল্লি। আজ অনুরূপ ঘটনায় যে ভাবে তাঁকে ‘সেফ প্যাসেজ’ দিয়ে ভারতে নিয়ে আসা হল, তার মহড়া বহু দিন আগেই সেরে রেখেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী সরকারের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি, প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়। পরবর্তী কালে তিনি যখন ইউপিএ সরকারের বিদেশমন্ত্রী, তখনও একই ভাবে বিমান প্রস্তুত থাকত আপৎকালীন পরিস্থিতিতে হাসিনাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার জন্য। সূত্রের খবর, হাসিনাকে উদ্ধারকার্যে কতটা সময় লাগতে পারে এবং তার সম্ভাব্য ঝুঁকি কী, সে সবই আগে থেকে মহড়া দিয়ে রেখেছিল ভারতের বায়ুসেনা।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, যখন সবে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন হাসিনা, তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাংলাদেশ রাইফেলস। এই সময়ে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছিল। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সামরিক কর্তাদের সবচেয়ে বড় গণহত্যা। সে সময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক নিজের হাতেই রেখেছিলেন হাসিনা। সূত্রের খবর, সেই সময়ে ভারতের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন হাসিনা। প্রণববাবু ছিলেন বিদেশমন্ত্রী। হাসিনার অনুরোধে ভারত প্যারাশুটার রেজিমেন্ট ব্যাটেলিয়ন তৈরি রাখে। বাংলাদেশে হাসিনার বাসভবনে সম্ভাব্য অবতরণের জন্যও সেনাদের তৈরি থাকতে বলা হয়। যদিও সে বার পরিস্থিতি কূটনৈতিক ভাবে সামাল দেওয়া গিয়েছিল।
১৯৭৫ সালে ১৫ অগস্ট বাংলাদেশে সেনাবিদ্রোহ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর সময় হাসিনা, তাঁর স্বামী আর বোন শেখ রেহানা ছিলেন ব্রাসেলস-এ। তার পর ২৪শে অগস্ট এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানে শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের বাকিরা দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে নেমেছিলেন। প্রথমে ৫৬ নম্বর রিং রোডের একটি ‘সেফ হাউস’-এ তাঁদের রাখা হয়েছিল। পরে ডিফেন্স কলোনির বাড়িতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। দশ দিন পরে, ৪ সেপ্টেম্বর 'র'-এর একজন কর্মকর্তা তাঁদের নিয়ে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাসভবনে পৌঁছন। ইন্দিরাকে প্রথমেই হাসিনা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘১৫ই অগস্ট ঠিক কী হয়েছিল?’’ সেখানে উপস্থিত এক জন অফিসার জানিয়েছিলেন, তাঁর পরিবারের আর কেউ জীবিত নেই। এটা শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন শেখ হাসিনা।
ওই পর্যায়েই ইন্দিরা সরকারের মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে শেখ হাসিনার পরিবারের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হাসিনার সন্তানদের মাঝে মাঝেই প্রণবাবুর সরকারি বাসভবনে খেলতে দেখা যেত। দু’টি পরিবারের মধ্যে মাঝে মাঝে শুধু দেখাই হত না, দিল্লির বাইরে পিকনিকেও তাঁরা যেতেন। তখন থেকেই হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকতেন প্রণববাবু।