লন্ডন থেকে কিছুটা দূরে হ্যামারস্মিথ। গ্রামে জনসংখ্যাও খুব বেশি ছিল না। তখনও বিদ্যুৎ আসেনি গ্রামে। ফলে একটা ভৌতিক পরিবেশ ছেয়ে থাকত সেখানে।
সালটা ১৮০৩। গ্রামে হঠাৎ শুরু হল ‘ভূতের’ উপদ্রব। ‘ভূতের’ ভয়ে গোটা গ্রাম ত্রস্ত হয়ে ওঠে। রাতবিরেতে কেউ বাড়ির বাইরে বেরোতে সাহস পেতেন না। পাছে ‘ভূতের’ কবলে পড়তে হয়!
কিন্তু কত দিন আর ঘরবন্দি হয়ে থাকবেন গ্রামবাসীরা। বাড়ি থেকে কাজের জন্য বেরোতেই কেউ না কেউ ‘ভূতের’ হামলার শিকার হতে শুরু করলেন।
আক্রান্ত হওয়া গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি ছিল, আপাদমস্তক সাদা চাদরের মতো কোনও বস্তু দিয়ে ঢাকা ছিল সেই অবয়ব।
আবার গ্রামবাসীদের অন্য অংশের দাবি ছিল, গায়ে পশুর চামড়া জড়ানো, চোখ দু’টি আগুনের ভাটার মতো জ্বলতে দেখেছেন তাঁরা।
গ্রামে রটে গিয়েছিল যে, এক গ্রামবাসীর অপঘাতে মৃত্যু হওয়ায় তাঁর ‘আত্মা’ই নাকি এ ভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই ‘ভূতের’ জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে তেনাকে ধরতে অস্ত্রশস্ত্র, বন্দুক নিয়ে রাতে পাহারা দিতে শুরু করলেন গ্রামবাসীরা।
গ্রামবাসীদের দাবি ছিল, সেই ‘ভূত’ নাকি কখনও জাপটে ধরত, কখনও আবার পিছু ধাওয়া করত। এক প্রসূতি নাকি এমন ভয় পেয়েছিলেন যে, কয়েক দিন পর মৃত্যু হয়েছিল তাঁর।
পাহারাদলের এক সদস্য এক দিন রাতে হঠাৎ সেই ‘ভূত’কে দেখতে পেলেন। দেখামাত্রই তার পিছু ধাওয়া করেন। ‘ভূত’ তখন নিজের সাদা বস্ত্র ফেলে দিয়ে পগারপার। সেই সাদা বস্ত্র পরে খুঁজে পান গ্রামবাসীরা। তখন আর কারও বুঝতে বাকি ছিল না যে এটা কোনও মানুষেরই কাজ!
শুরু হয় সেই মানুষ ‘ভূত’ অন্বেষণের কাজ। ইতিমধ্যেই ‘ভূত’ ধরতে গিয়ে এক বছর অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তখনও আতঙ্ক কাটেনি হ্যামারস্মিথের বাসিন্দাদের।
সাল ১৮০৪। হ্যামারস্মিথের এক বাসিন্দা, আবগারি দফতরের কর্মী ফ্রান্সিস স্মিথ ওই গ্রামে রাতে পাহারা দিচ্ছিলেন। রাত ১১টা নাগাদ হঠাৎ তিনি দেখেন একটি সাদা অবয়ব হেঁটে যাচ্ছে। হাতের শটগানটা তাক করে ‘ভূত’কে তার পরিচয় দিতে বলেন। কিন্তু সাদা পোশাক পরা সেই মূর্তি যখন কোনও সাড়া দেয়নি, সটান গুলি চালিয়ে দেন স্মিথ।
পরে দেখা যায়, স্মিথ যাঁকে ‘ভূত’ ভেবে গুলি চালিয়েছিলেন তিনি আদতে এক জন মানুষ। নাম টমাস মিলউড। পেশায় তিনি এক জন রাজমিস্ত্রি। কর্মসূত্রে বাইরে থাকতেন।
জানা গিয়েছিল, মা-বাবার সঙ্গে দেখা করে আবার কর্মস্থলে ফিরছিলেন মিলউড। তাঁর পরনের পোশাক এবং জুতো পুরোটাই সাদা ছিল। ‘ভূত’-এর সঙ্গে পোশাকে হুবহু মিলে যাওয়ায় স্মিথ তাঁকে ‘ভূত’ ভেবে গুলি চালান। বেঘোরে প্রাণ যায় মিলউডের।
‘ভূত’ ধরতে গিয়ে স্মিথের সাজা হলেও আসল ‘ভূতের’ তখনও খোঁজ না পাওয়ায় গ্রামবাসীরা মরিয়া হয়ে ওঠেন। কিন্তু সেই ‘ভূতের’ হদিশ মেলেনি।
‘ভূত’ ভেবে মিলউডকে গুলি করে হত্যার মামলা নিয়ে যখন শোরগোল চলছে হ্যামারস্মিথে, ঠিক তখনই জন গ্রাহাম নামে এক মুচি সোজা হাজির হন আদালতে।
বিচারককে গ্রাহাম জানান, তাঁর এক সহযোগী প্রায়ই তাঁর সন্তানদের ভূতের গল্প শুনিয়ে ভয় দেখাতেন। সেই সহযোগীকে ভয় দেখানোর জন্য তিনিই সাদা পোশাকে রাতে ঘুরে বেড়াতেন। কিন্তু তাঁর সেই দাবি ধোপে টেকেনি।
‘ভূত’ ধরা না পড়লেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হ্যামারস্মিথে সেই আতঙ্কও কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও স্থানীয়দের অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, প্রতি ৫০ বছর অন্তর সেই ‘ভূত’ ফিরে আসে গ্রামে।