কাজের সূত্রেই হোক বা অন্য কোনও কারণে, আজকাল অনেকেই একা থাকেন। ফলে সংসারের যাবতীয় কাজ সামলাতে হয় একার হাতেই। কিন্তু ভাবুন তো, ঘরের সমস্ত কাজকর্ম করার জন্য যদি এমন এক জন থাকতেন যিনি কাজের পাশাপাশি আপনার মনের কথাও শুনতেন! এমনটাই সম্ভব এখন জাপানে। মাত্র ৬০০ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে! কী করে?
আইডিয়াটা তাকানোবু নিশিমোতোর। তবে শুধুমাত্র আইডিয়া বার করেই থেমে থাকেননি বছর পঞ্চাশের তাকানোবু। তা কাজে লাগানোর জন্য ‘ওশান রেন্টাল’ নামে একটা অনলাইন পরিষেবা সংস্থাও খুলে ফেলেছেন তিনি।
কী পরিষেবা দেয় ‘ওশান রেন্টাল’? মূলত নিঃসঙ্গ মানুষজনের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াই এদের কাজ। একাকী মানুষদের ঘরসংসারের কাজ করা থেকে শুরু করে তাঁদের সঙ্গে সময় কাটানো, সবই করে তাকানোবুর ওই সংস্থা।
কেমন করে কাজ করে তাকানোবুর সংস্থা? জাপানে বসবাসকারীরা ‘ওশান রেন্টাল’-এর পরিষেবা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হলে ওই সংস্থা থেকে আপনার কাছে পৌঁছে যাবেন এক জন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। যিনি আপনার কথা মন দিয়ে শুনবেন। আপনার ঘরের যাবতীয় কাজকর্ম করে দেবেন। এমনকি, আপনার সমস্যার সমাধানে পরামর্শও দেবেন। একেবারে আপনজনের মতো!
এত সব পরিষেবার খরচটাও কিন্তু ভালই। তা পেতে হলে খরচ করতে হবে ঘণ্টায় ৬০০ টাকা।
২০১২ সালে টোকিয়োতে নিজের বাড়ি থেকেই এই অনলাইল পরিষেবা সংস্থাটি শুরু করেছিলেন তাকানোবু। নামটা ‘ওশান রেন্টাল’ কেন? তাকানোবু জানিয়েছেন, জাপানে ‘ওশান’-এর অর্থ হল মধ্যবয়স্ক। তাই এই নাম বেছে নেওয়া।
জাপানে মধ্যবয়স্ক মানুষজনদের নিয়ে অনেকেই ঠাট্টাতামাশা করেন। এ সময়েই তো মাথায় চুল পাতলা হতে শুরু করে। একটা নোয়াপাতি ভুঁড়িও দেখা দেয়। সেই সঙ্গে যাবতীয় অনিয়ম তো রয়েইছে। তার উপর যদি একাকী হন তো কথাই নেই! মনের কথা শোনানোর জন্য কাউকে পাশে মেলে না। এ ধরনের মধ্যবয়স্কদের জন্যই তাঁর পরিষেবা সংস্থা শুরু করেন তাকানোবু।
‘ওশান রেন্টাল’-এর কর্মীরা একাকী মানুষজনের ঘরসংসারের কাজকর্ম করে বা পরামর্শ দিয়েই থেমে থাকেন না। তাঁদের পার্টি বা পানশালাতেও সঙ্গ দেন। এমনকি, প্রেমঘটিত বা অফিসের সমস্যার সমাধানও করেন। অথবা আপনার বাড়ির ফার্নিচার এক ঘর থেকে অন্যত্র সরাতেও এই সংস্থার পরিষেবা নিতে পারেন আপনি। এক কথায় যাকে বলে অল ইন ওয়ান!
তবে এ ধরনের কাজকর্মে যিনি আপনাকে সঙ্গ দেবেন, তিনি কতটা বিশ্বস্ত? এমন প্রশ্ন তো করতেই পারেন। তাকানোবু জানিয়েছেন, তিনি নিজেই তাঁর সংস্থার কর্মীদের বাছাই করে নিয়োগ করেন। নিজের সংস্থার গ্রাহকদের সুরক্ষাই অগ্রাধিকার পায় তাঁর কাছে।
‘ওশান রেন্টাল’-এর দাবি, কর্মী নিয়োগের আগে তাঁদের ভাল ভাবে যাচাই করে নেওয়া হয়। কর্মপ্রার্থীর কোনও অপরাধমূলক অতীত রয়েছে কি না, তা জেনে তবেই তাঁদের সংস্থায় নিয়োগ করা হয়। এ ছাড়া, সংস্থার কর্মীরা যাতে তাঁদের গ্রাহকদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়়িয়ে না পড়েন, সে দিকেও খেয়াল রাখা হয় বলে দাবি সংস্থা কর্তৃপক্ষের।
আপাতত তাকানোবুর এই সংস্থার বেশ রমরমা জাপানে। তাঁর দেখাদেখি অনেকেই সে দেশে এ ধরনের পরিষেবা খুলে ব্যবসা জমিয়ে ফেলেছেন। নিশ্চয়ই ভাবছেন, কবে যে এমন একটা সংস্থা শুরু হবে এ দেশে!