রুক্ষ্ম ভূ-প্রকৃতি। বছরের পর বছর বৃষ্টির দেখা পান না মানুষজন। তার দোসর এই মরু অঞ্চলের শুষ্ক হাওয়া। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমনই যে চাষবাস তো দূর অস্ত্ সামান্য বীজবপন করে চারাগাছ তৈরি করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছিল সেখানে।
এই নির্মম প্রকৃতির বুকেও সবুজের হাতছানি আনতে এক অভিনব পন্থা বার করেছিলেন এখানকার আদি বাসিন্দারা।
উঁচু প্রাচীর বানিয়ে কুয়াশা আটকে তাকে জলকণায় পরিণত করে মাটি ভিজিয়ে তারপর সেখানে বীজ থেকে চারাগাছ তৈরি করতেন তাঁরা! কোনও উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া খুব সহজ পদ্ধতিতেই এই কাজ করতে সমর্থ হয়েছিলেন তাঁরা।
ইটালির প্রত্যন্ত এক দ্বীপ প্যান্টেলেরিয়া। খুব কম লোকের বাস সেই দ্বীপে। এই প্রত্যন্ত দ্বীপে পর্যটকেরাও খুব একটা যান না।
একটি ছোট জায়গায় উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা অংশের ভিতরে কুয়াশা আটকে যায়। তারপর পাথুরে দেওয়ালে এক এক করে জলকণা জমতে শুরু করে। সেই জলকণা দেওয়াল বেয়ে নীচে নেমে এসে মাটি ভিজিয়ে দেয়।
প্রাচীরের দেওয়াল ঘেষে মাটির মধ্যে বীজ পুঁতে রাখা হয়। জল পেয়ে সেই বীজই ক্রমশ চারাগাছে পরিণত হয়।
প্রাচীর অনেক উঁচু হওয়ায় সহজে মাটি পর্যন্ত সূর্যের আলো পৌঁছতে পারে না। ফলে মাটি ভিজে থেকে যায়।
এ ভাবেই এখনও ওই দ্বীপে বীজ থেকে চারাগাছ তৈরি করেন এলাকার মানুষজন। প্রাচীর ঘেরা ওই বাগানটিকে বলা হয় ‘প্যান্টেলেরিয়ান বাগান’।
ওই প্রাচীরের দেওয়াল ৫ ফুট চওড়া। ৩০ ফুট পরিধি ঘিরে রয়েছে প্রাচীরটি।
প্রাচীরের দেওয়ালে ছোট একটি ফাঁকা জায়গা রয়েছে। সেখান দিয়ে বাগানের ভিতরে প্রবেশ করা যায়।
সারা বিশ্বে একমাত্র প্যান্টেলেরিয়াতেই কুয়াশা ধরে রেখে চাষের এ রকম অভিনব উপায় দেখা যায়।
ঠিক কত দিন আগে এই প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল তা সঠিক জানা যায়নি। কাদের মাথায় এ রকম অভিনব উপায় এসেছিল তাও জানা যায়নি।
তবে ইতিহাসবিদদের ধারণা, প্যান্টেলেরিয়াতে বিভিন্ন সময়ে বসতি বিস্তার করা ফোয়েনিসিয়ানস, রোমান, গ্রিক, আরব কিংবা অটোমানরা এটা করে থাকতে পারেন।
মূলত চাষবাসের উপর নির্ভরশীল এই সমস্ত মানুষেরা বসতি স্থাপনের চেষ্টাতেই এই উপায় বার করেছিলেন।
এ রকম প্রাচীর ঘেরা বাগান প্যান্টেলেরিয়ায় এক সময় অসংখ্য ছিল। কিন্তু এর বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন কয়েকটিই মাত্র ঠিক রয়েছে যেগুলি পর্যটকদের আকর্ষণ করে।