—প্রতীকী চিত্র।
যখন কোনও কল্পনাই বাস্তব হয়ে যায়, সত্য ঘটনা যখন গল্প-উপন্যাসের থেকেও শিহরণ জাগানো হয়, তখন...! সাম্প্রতিক কালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি এবং আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সীমাহীন অগ্রগতি সত্যি আর মিথ্যার ফারাক মুছে দিচ্ছে। এমনই আশঙ্কার কথা বলছেন সাইবার বিশেষজ্ঞেরা। বেপরোয়া ভাবে যার মুনাফা লুটছে সাইবার-অপরাধীরা।
একটি ছোট্ট ঘটনা। এক আমেরিকান মহিলার কাছে ফোন আসে। ওপারে মেয়ের গলা। ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেয়ে। তাকে অপহরণ করা হয়েছে। মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। এতটুকু সন্দেহ হয়নি মহিলার। মেয়েকে অপহরণকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে তাদের দাবি মেনে নেন তিনি। কিন্তু পরে জানা যায়, এমন কিছুই হয়নি। ফোনের কণ্ঠস্বরটি তাঁর মেয়ের ছিলই না। সবটাই এআই-এর কেরামতি। আমেরিকার প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা যাচ্ছে, এ দেশে এ ধরনের জালিয়াতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সৌজন্যে এক ধরনের বিশেষ ‘এআই ভয়েস ক্লোনিং টুল’। ইন্টারনেটে একটু খুঁজলেই যাপাওয়া যাবে।
একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন এসেছিল অ্যারিজ়োনার বাসিন্দা জেনিফার ডিস্টিফানোর কাছে। তিনি জানিয়েছেন, ফোনে স্পষ্ট শুনেছিলেন মেয়ের গলা, ‘‘বাঁচাও মা, দয়া করে আমাকে করে বাঁচাও।’’ ১৫ বছরের কিশোরী মেয়ের গলা চিনতে এতটুকু অসুবিধা হয়নি মহিলার। জেনিফার জানিয়েছেন, তিনি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত ছিলেন, ওটা মেয়েরই কণ্ঠস্বর। সে একটি স্কিয়িং ট্রিপে গিয়েছিল। জেনিফার ভাবেন, বেড়াতে গিয়ে বিপদে পড়েছে মেয়ে। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেনিফার বলেন, ‘‘আমার মনে কোনও প্রশ্নই আসেনি, যে এটা কার গলা। একদম আমার মেয়ের গলাই ছিল... ও কাঁদলে ঠিক এ রকমই শোনায়। আমার এক সেকেন্ডের জন্য সন্দেহ হয়নি।’’ এই ঘটনার কিছু ক্ষণ পরেই আর একটি অচেনা নম্বর থেকে ১০ লক্ষ ডলার মুক্তিপণ চাওয়া হয়।
১০ লক্ষ ডলার অবশ্য দিতে হয়নি জেনিফারকে। এআই-পরিচালিত ছক ভেস্তে যায় যখন জেনিফার তাঁর মেয়ের নম্বরে ফোন করেন। কিন্তু গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত আমেরিকার সাইবার অপরাধ দমন দফতর। পুলিশি তদন্ত চলছে। একটি এআই সংস্থার সিইও ওয়াসিম খালেদ বলেন, ‘‘এআই ভয়েস ক্লোনিং এতটাই অবিশ্বাস্য রকমের প্রযুক্তি, যে সত্যি-মিথ্যা ধরা কঠিন। কারও কাছ থেকে কোনও গোপন তথ্য বার করা কিংবা মোটা অঙ্কের অর্থহাতানো অপরাধীদের জন্য আরও সহজ হয়ে গিয়েছে।’’
ইন্টারনেটে কণ্ঠস্বর-চুরির এমন একাধিক অ্যাপ রয়েছে, খুঁজে বার করতে পারলেই হল। এর মধ্যে বেশ কিছু অ্যাপ বিনামূল্যেই ব্যবহার করা যায়। কোনও অনলাইন পোস্ট থেকে কারও কণ্ঠস্বর নিয়ে তার প্রতিলিপি তৈরি করা কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। আর তার পর, তৈরি ফাঁদ।