নলিনীকান্ত ও গৌরী দাস। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
বাড়িঘর অক্ষত রয়েছে। ছেলে-বৌমা ভাল আছে। পাড়া-পড়শিদেরও কাউকে হামলার মুখে পড়তে হয়নি।
তাই এ দেশের ভেলোরে হৃদ্রোগের চিকিৎসা করিয়ে শনিবার পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে নিশ্চিন্তেই স্ত্রী গৌরীকে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরলেন বৃদ্ধ নলিনীকান্ত দাস। দেশের হিংসার আঁচ লাগেনি তাঁদের গ্রাম— যশোরের মণিরামপুরের এরেন্ডায়। কারণ, গ্রামের যুবকেরা একজোট হয়ে পাহারা দিয়ে দুষ্কৃতীদের ঢুকতেই দেননি, সীমান্তে দাঁড়িয়ে বললেন দম্পতি।
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও হিংসা, লুটপাট, দোকানপাট-বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বেশির ভাগ বাংলাদেশিই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে সঙ্গী করে যাতায়াত করছেন। সেখানে দাস দম্পতির নিশ্চিন্ত থাকা ব্যতিক্রমীই! এক মাস আগে তাঁরা ভারতে আসেন।
নলিনীকান্ত জানান, তাঁদের গ্রামে হিন্দু-মুসলিম— দুই সম্প্রদায়ের মানুষেরই বাস। বিপদে-আপদে তাঁরা পরস্পরের পাশে থাকেন। ১৯৭১ সালর পর থেকে তাঁদের গ্রামে কখনও কোনও অশান্তি হয়নি বলে তাঁর দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘একতাই আমাদের শক্তি।’’
পাশ থেকে গৌরীর সংযোজন, ‘‘বাড়িতে ছেলে-বৌমা রয়েছে। তাদের ফেলে এ দেশে থাকার সময়ও আমরা নিশ্চিন্তে ছিলাম। কারণ, পাড়ার দুই সম্প্রদায়ের যুবকেরাই ওদের ভরসা দিয়ে আসছিল। ওরা গ্রাম পাহারা দিচ্ছে। কোনও সমস্যা হলে জানাতে বলেছে। এর থেকে বড় ভরসা আর কী হতে পারে!’’
এরেন্ডায় গোলমাল না হলেও ২৭ কিলোমিটার দূরে, মণিরামপুর বাজারে হামলা, দোকানে লুটপাট, ভাঙচুর হয়েছে বলে জানান নলিনীকান্ত। ভয়ে এখনও সেখানকার অনেকেই রাতে চিলেকোঠার ঘরে আশ্রয় নিচ্ছেন।
এরেন্ডার মতোই দুষ্কৃতীদের ঠেকাতে গ্রামবাসীরা এককাট্টা হয়েছেন বাগেরহাটেও। সেখানে বারাসতের ইস্মিতা বক্সীর বাপের বাড়ি। স্বামী-সন্তানকে নিয়ে এ দিন দেশে ফিরে কেঁদে ফেললেন। বললেন, ‘‘ডাকাতদের আতঙ্কে রাতে ঘুমোতে পারতাম না। তবে, পাড়ার ছেলেরা সতর্ক ছিল।’’ তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টের সময় পাড়ার ছেলেরা মাইকে ডাকাত আসার কথা ঘোষণা করে সকলকে সতর্ক হতে বলে। মসদিজ থেকেও ঘোষণা হয়। লোকজন লাঠি, ছরি, দা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ইস্মিতার কথায়, ‘‘আমাদের গ্রামে ডাকাতি না হলেও পাশের গ্রামে হয়েছে। ছোটবেলা থেকে এমন পরিস্থিতি কখনও দেখিনি। প্রাণ হাতে নিয়ে চলে এসেছি। হামলাকারীরা সব বহিরাগত দুষ্কৃতী। বাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি গরু, হাঁস, মুরগি, হাঁসের ডিম, চাল, বৈদ্যুতিক মোটর— যা পাচ্ছে নিয়ে যাচ্ছে।’’
তবে, গ্রামবাসীরা সকলে একজোট থাকলে এমন পরিস্থিতিতেও যে ভরসা মেলে— বলছেন ইস্মিতা, নলিনীকান্তেরা।