এই পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অপার রহস্য। অহরহ এমন অনেক ঘটনা ঘটে চলেছে, যা বৈজ্ঞানিক বিচার বুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করা যায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের মল্ট্বি কবরখানা ঘিরে এমনই কিছু রহস্য জড়িয়ে আছে, যার ব্যাখা খুঁজতে গেলে কপালে ভাঁজ পড়তে বাধ্য।
এই কবরখানার এক বিশেষ কবরে পৌঁছতে গেলে পেরতে হবে একটি দরজা, পার করতে হবে তেরোটি সিঁড়ি। যাকে বলে ‘স্টেয়ার টু হেল। সেই সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামলেই নাকি খুলে যাবে এক অজানা জগত যা সাক্ষাৎ নরকের সমান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দিনের বেলা সব কিছু স্বাভাবিক দেখতে লাগলেও রাত হলেই সেখানে নাকি নেমে আসে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। জাগতিক কোনও শব্দই নাকি পৌঁছয় না সেখানে।
খ্রিস্ট ধর্মে ১৩ সংখ্যাকে অশুভ হিসেবে গণ্য করা হয়। বাইবেল অনুযায়ী যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে যাঁরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১৩ নম্বর ছিলেন জুডাস। তাই এত সংখ্যা থাকতে কেন ১৩টি ধাপ যুক্ত সিঁড়িই বানানো হল, তা নিয়ে বারেবারেই প্রশ্ন জেগেছে অতিপ্রাকৃতিক বিশেষজ্ঞদের মনে।
জানা গিয়েছে, মল্ট্বি শহরেরই এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্যদের কবরে পৌঁছতেই নাকি পার করতে হয় রহস্যে ঘেরা এই সিঁড়ি। কথিত আছে, এই পরিবারের প্রায় প্রত্যেকেই নাকি শয়তানের উপাসক ছিলেন। তাঁদের মৃত্যুর পর সবাইকে একই জায়গায় কবর দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বহু মানুষ এই ঘটনার সত্যতা বিচারে বারেবারেই সেই সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে আর উপরে উঠে আসেননি। আর যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে হয়ে গিয়েছেন বদ্ধ উন্মাদ।
রাত বাড়লেই নাকি এই কবরের আশেপাশে শোনা যায় ফিসফাস, দমফাটা হাসির আওয়াজ আর নারী কণ্ঠের হাহাকার।
বিখ্যাত প্যারানরমাল বিষয়ক লেখক ডিএস ডুবি বলেন, কোনও পারিবারিক কবরে কেন দরজা লাগানো থাকবে সেটাই আশ্চর্যের! নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানাচ্ছেন, এই সিঁড়ি দিয়ে নামলে নাকি মানুষের মনে এক অদ্ভুত হতাশা গ্রাস করে। শরীরও ক্রমশ হালকা অনুভব হতে শুরু করে। মনে হতে থাকে, এই পৃথিবীতে যেন আর কোনও প্রাণ নেই। চারিদিকে শুধু মৃত মানুষের ভিড়।
সিঁড়ির মাঝ বরাবর গিয়ে পিছন দিকে তাকালেই নাকি দেখা যাবে এক ছোট্ট চেয়ার। তবে কবরের তলায় চেয়ার কোথা থেকে এল তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি।
শেষ ধাপে পৌঁছে যদি পিছনে তাকানো হয়, তা হলে নাকি সামনে ফুটে উঠবে ‘নরকের ছবি’ বা তার চেয়েও ভয়ঙ্কর কিছু। তবে এই 'নরকের ছবি' যে আসলে কী তা খোলসা করে বলতে পারেননি কেউই।
জানা গিয়েছে, একবার নাকি ছোট ছেলেমেয়ের একটি দল কৌতুহল বশে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে যায়। যখন তাদের উদ্ধার করা হয়, তখন কেউই সুস্থ অবস্থায় ছিল না। অনেকেরই নাকি মানসিক বিকার দেখা গিয়েছিল তার পর থেকে।
এই নরকের সিঁড়ি আসলে কী? কেনই বা একে ওই নামে ডাকা হয়, তা এখনও রহস্য। তবে এই সিঁড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অন্ধবিশ্বাস আর গল্প অগুন্তি। জানা গিয়েছে, মানুষের অপার কৌতুহলে রাশ টানার জন্য সম্প্রতি সিমেন্ট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এর প্রবেশ পথ। অজানা রহস্য না জানা হয়েই রয়ে গিয়েছে সেই তেরো ধাপ সিঁড়িকে ঘিরে।