ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করে বহু ভিডিয়ো আপলোড করেছিলেন ইউটিউবে। এমনই দুই পাকিস্তানি ইউটিউবারকে নাকি ফাঁসি দিয়েছে সে দেশের সেনা! এমনই একটি খবরে গত কয়েক দিনে ছেয়ে গিয়েছে সমাজমাধ্যম। শুরু হয়েছে তরজা, বিতর্ক।
সমাজমাধ্যমে উঠে আসা বিভিন্ন পোস্ট এবং প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই দুই পাক ইউটিউবারের নাম সানা আমজ়াদ এবং শোয়েব চৌধরি। ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর নামে ভাল ভাল কথা বলাই নাকি কাল হয়েছে তাঁদের। দু’জনকেই ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে।
সমাজমাধ্যমের ওই পোস্টগুলি অনুযায়ী, শুধু সানা এবং শোয়েব নয়, পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা টেনে ভারতের সুখ্যাতি করার জন্য সে দেশের কমপক্ষে ১২ জন ইউটিউবারকে নাকি ফাঁসি দিয়েছে পাক সেনা।
কিন্তু কেন এই জল্পনা? কোথায় তার সূত্রপাত? জল্পনাগুলি তৈরি হয়েছে, সানা এবং শোয়েব ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর খেকে। ওই দুই ইউটিউবারের চ্যানেলগুলিও নাকি হঠাৎ করেই নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে জনগণের সাক্ষাৎকার ও প্রতিক্রিয়া নেওয়া এবং পরে তা ইউটিউবে আপলোড করার জন্য পাকিস্তানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন সানা এবং শোয়েব। তাঁদের চ্যানেলের দর্শক ছিলেন অনেক ভারতীয়ও।
শোয়েবের চ্যানেলের নাম ‘রিয়্যাল এন্টারটেনমেন্ট’। অন্য দিকে সানা চ্যানেলের নাম রেখেছিলেন নিজের নামে। পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি এবং জনমত নিয়ে ভিডিয়ো বানাতেন তাঁরা দু’জনেই। তাঁদের সেই ভিডিয়োয় মাঝেমধ্যেই উঠে আসত ভারতের প্রসঙ্গ।
সানা একটি ভিডিয়োয় প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রশংসা করেছিলেন। সেই ভিডিয়োর শিরোনাম ছিল ‘মোদী সাড্ডা শের হ্যায় (মোদী এক জন সিংহ)’।
ভিডিয়োটিতে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করা নিয়েও মোদী সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন সানা। যদিও পরে সেই ভিডিয়ো ইউটিউব থেকে সরানো হয়েছিল। বিতর্কও হয়েছিল বিস্তর।
সানা এবং শোয়েব— দু’জনেই তাঁদের ভিডিয়োয় সে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, বেকারত্ব এবং আর্থিক সঙ্কটের জন্য পাক প্রশাসনের সমালোচনা করেছিলেন। নিজের দেশের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন ভারতের। এর জন্য তাঁদের সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়।
পাক নেটাগরিকদের একাংশের দাবি ছিল, ওই দুই ইউটিউবার ‘ইচ্ছা করে’ ছোট করছেন পাকিস্তানকে। বেশি বেশি ‘লাইক’, ‘সাবস্ক্রাইবার’ এবং বিজ্ঞাপন পাওয়ার আশায় ভারতের প্রশংসা করছেন তাঁরা।
কিন্তু দুই ইউটিউবার ১৯ দিনেরও বেশি সময় ধরে কোনও ভিডিয়ো আপলোড না করার কারণে সন্দেহ জাগে তাঁদের অনুরাগীদের মনে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তাঁরা নিখোঁজ। সেখান থেকেই তৈরি হয় জল্পনা। জল্পনা ইন্ধন জোগায় তাঁদের ফাঁসির তত্ত্বে।
তাঁদের অনুরাগীদের অনেকেরই দাবি, পাকিস্তানের সত্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য শাস্তি পেয়েছেন দুই ইউটিউবার। পাশাপাশি তাঁদের শাস্তি দিয়ে বাকি ইউটিউবারদেরও নাকি সতর্ক করেছে পাক প্রশাসন।
কিন্তু সত্যিই কি সানা এবং শোয়েবকে ফাঁসি দিয়েছে পাকিস্তানি সেনা? দুই ইউটিউবারের ফাঁসি হয়েছে বলে যে জল্পনা ছড়িয়েছে, তা মিথ্যা বলে দাবি করেছেন পাক সাংবাদিক আরজু কাজ়মি।
এক্স হ্যান্ডলে ভাইরাল একটি পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পুরো বিষয়টি ‘ভুয়ো’ বলে উল্লেখ করেছেন আরজু। তাঁর দাবি, অভিযুক্ত দুই ইউটিউবারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে পাকিস্তানি প্রশাসন। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার খবর অসত্য।
বিষয়টি নিয়ে আরজুর দাবিকেই সমর্থন করছেন পাক নেটাগরিকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, দুই ইউটিউবারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে এবং তদন্ত সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এই ধরনের খবর সমাজমাধ্যমে না ছড়ানোই ভাল।
তা সত্ত্বেও দুই ইউটিউবারের অন্তর্ধান রহস্য পাকিস্তানি ইউটিউব সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। পাক নাগরিকদের বাক্স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকার প্রসঙ্গেও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে সমাজমাধ্যমে।