ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। ফাইল ছবি।
ব্রেক্সিটের ফলে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে তৈরি হওয়া বাণিজ্যিক জট অবশেষে কাটতে চলেছে। যার একমাত্র কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনককে। গত কাল উইনসরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লেয়েনের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি সই করেছেন সুনক। যার সরকারি নাম ‘উইনসর ফ্রেমওয়ার্ক’। এই চুক্তির মাধ্যমেই নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের মানুষ স্বস্তি পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
নতুন চুক্তির ফলে বরিস জনসনের আমলে করা ‘নর্দার্ন প্রোটোকল’ পুরোপুরি বাতিল হয়ে গেল। আসলে ব্রেক্সিটের পর থেকে চুক্তির জটের কারণেই ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ড থেকে সসেজ, মাংস, ফল, আনাজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে আমদানির পরিমাণ একেবারেই কমে গিয়েছিল। ফলে সেখানকার সাধারণ মানুষ চরম সমস্যায় পড়েছিলেন। সেই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ‘নর্দার্ন প্রোটোকল’ নামে একটি চুক্তি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত জটিলতার কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। সুনক সেই প্রোটোকল পুরোপুরি বাতিল করে দিয়েছেন। নতুন এই চুক্তির ফলে ব্রিটেনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিক্ত সম্পর্কও কিছুটা ঠিক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত কাল সুনকের পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন উরসুলা। সেখানে তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে ‘ডিয়ার ঋষি’ বলে সম্বোধনও করেন। জনসনের আমলে ব্রিটেনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই ধরনের মধুর সম্পর্কের কথা ভাবাই যেত না বলে মনে করছেন ব্রিটিশ সরকারের একটা অংশ। তাঁদের আরও বক্তব্য, বরিস এখন সুনকের আনা চুক্তিকে সমর্থন না করলে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার পুরোপুরি শেষ হয়ে যেতে পারে। কারণ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্যিক এই জট কাটানোটা সুনকের কেরিয়ারের ক্ষেত্রে বিশাল জয় বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা। মূলত এই জটের জন্যই প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয়েছিল টেরেসা মে-কে। তিনিও সুনকের নতুন এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘এর ফলে গোটা নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের মানুষ উপকৃত হবেন।’’
জনসনের আমলে যা সম্ভব হয়নি, তা সুনক সরকার কী ভাবে করে দেখাল, প্রশ্ন করা হয়েছিল উরসুলাকে। তিনি অবশ্য কৌশলে বরিসের নাম এড়িয়ে গিয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘‘আসলে ইউক্রেনের যুদ্ধ আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমরা বুঝেছি ব্রিটেন আর ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এখন হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।’’ সুনক বলেছেন, ‘‘উইনসর ফ্রেমওয়ার্কের ফলে ব্রিটেনের সঙ্গে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডর সীমারেখা পুরোপুরি মুছে যাবে।’’
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সুনকের তৈরি করা নতুন চুক্তিতে ব্রিটেনের সীমানা পেরিয়ে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে জিনিসপত্র পৌঁছনোর পদ্ধতি অনেক সরল হচ্ছে। নতুন চুক্তির নীতি মানলে সরকারি কাজ সারতে সময়ও অনেক কম লাগবে। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের উপরে জারি করা কিছু কিছু জিনিসের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে রাজি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ও।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই চুক্তিকে সমর্থন করার জন্য ইতিমধ্যেই বিরোধী লেবার পার্টি এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির নেতাদের রাজি করিয়ে ফেলেছেন সুনক। তাঁর সামনে এখন একমাত্র চ্যালেঞ্জ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ইউনিয়নিস্ট দলগুলি। যার জন্য আজই বেলফাস্টে গিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। আপাতত ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির সমর্থন পাওয়াই সুনকের প্রধান উদ্দেশ্য। তিনি বেলফাস্ট পৌঁছেই সেখানকার মানুষের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘এই চুক্তি আমার বা কোনও রাজনৈতিক দলের সুবিধার্থে করা হয়নি। এটা একমাত্র সাধারণ মানুষের জন্য তৈরি করা একটা চুক্তি।’’ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক দল সিন ফেন ইতিমধ্যেই সুনকের চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। ‘উইনসর ফ্রেমওয়ার্ক’কে সমর্থন করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আইরিশ প্রধানমন্ত্রী লিয়ো ভারাদকর-ও।