সরাইখানা, মুসাফিরখানা পান্থনিবাস থেকে পাশ্চাত্যের ‘ইন’। বিভিন্ন নামে প্রাচীনকাল থেকে অতিথিদের আপ্যায়ন জানিয়ে আসছে বিশ্রামাগারগুলি। আজ, আমাদের কাছে সবকিছুর অস্তিত্ব মিলেমিশে গিয়েছে ‘হোটেল’-এ। ইংরেজিতে শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ ‘ওতেল’ থেকে। বর্তমানে বিশ্বের প্রাচীনতম এবং এখনও সক্রিয় হোটেলটি আছে জাপানে।
হোটেলের নাম, ‘নিশিয়ামা ওনসেন কেইয়ুনকান’। ফুজিয়ামা পর্বতের কাছে পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্যে এই হোটেলটি চলছে সেই ৭০৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে।
একই পরিবারের ৫২টি প্রজন্ম পর্যায়ক্রমে হোটেলের দায়িত্বভার সামলেছে। প্রাচীনতম অথচ এখনও চালু রয়েছে এই পরিচয়ে হোটেলটি ২০১১ সালে স্বীকৃতি পেয়েছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে।
১৩১৫ বছর আগে এই হোটেলের গোড়াপত্তন হয়েছিল ফুজিওয়ারা মাহিতোর হাতে। তাঁর বাবা ছিলেন জাপানের ৩৮তম সন্রাট তেনজি-র ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে মাহিতো বংশের উত্তরসূরিরাই এই হোটেলের কর্ণধার হয়ে থেকেছেন। ৫২টি প্রজন্মে হাতবদল হয়েছে ক্ষমতা। সেই ধারায় ছিলেন দত্তক সন্তানরাও।
সময়ের দাবিতে হোটেলে বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে মূল কাঠামোতে এখনও প্রাচীন জাপানি সাজসজ্জার রীতি ধরে রাখা হয়েছে।
সুপ্রাচীন এই হোটেলের মূল আকর্ষণ হল উষ্ণ প্রস্রবণ।
সামুরাই যোদ্ধা, প্রখ্যাত রাজনীতিক-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বহু খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব প্রাচীন কাল থেকে এই হোটেলের আতিথ্য গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে এই হোটেলে এক রাত কাটাবার ন্যূনতম খরচ ভারতীয় মুদ্রায় ৩৫ হাজার টাকারও বেশি।
জাপানের হায়াকাওয়া প্রদেশে আকাইশি পর্বতের পাদদেশে এই হোটেলের উষ্ণ জলের উৎস হল স্থানীয় হাকুহো প্রস্রবণ।
অতিথিদের জন্য হোটেলে মোট ৩৭টি ঘর আছে। কয়েক বছর আগে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে প্রতি ঘরেই আলাদা করে উষ্ণ প্রস্রবণের জলের যোগান দেওয়া যায়। যাতে অতিথিরা ‘হট স্প্রিং বাথ’-এর সুবিধে নিতে পারেন নিজেদের ঘরে থেকেই।
ফুজি পর্বতের কাছাকাছি অবস্থান হলেও এই হোটেল থেকে তা দেখা যায় না।
তবে পর্যটকদের আরও একটি আকর্ষণ হল ঝকঝকে আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ দেখা। তাঁদের জন্য হোটেলে রয়েছে ‘মুন ভিউয়িং প্ল্যাটফর্ম’।
অন্দরসজ্জার পাশাপাশি হোটেলকর্মীদের পোশাকেও রয়েছে জাপানি ঐতিহ্যের ছোঁয়া।
হোটেলের রেস্তরাঁয় বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া গেলেও পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে আছে জাপানি খাবারই।
প্রাচীনত্বের গন্ধ গায়ে মেখে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আরও বেশ কিছু হোটেল। সেরকমই একটি হল ইংল্যান্ডের নরউইচের ‘মেইডস হেড হোটেল’। বর্তমান হোটেলের প্রাচীনতম অংশটি তৈরি হয়েছিল পঞ্চদশ শতকে। এর ‘ওক রুম’-এ বসে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দেওয়ার মজাই আলাদা।
ইংল্যান্ডের আর এক প্রাচীন হোটেল ‘এল্ড হল হোটেল’ আছে বাক্সটনে। হাজারের বেশি বয়স এই হোটেলে এক সময় অতিথি হয়ে ছিলেন ‘রবিনসন ক্রসো’-র লেখক ড্যানিয়েল ডিফো।
ইংল্যান্ডের বলভেন্টরের আর এক প্রাচীন হোটেল ‘জামাইকা ইন’ শুরু হয়েছিল ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে।
ইংল্যান্ডের বলভেন্টরের আর এক প্রাচীন হোটেল ‘জামাইকা ইন’ শুরু হয়েছিল ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে।
আমেরিকার ‘কলোনিয়াল ইন’ এবং ‘দ্য ওমনি হোমস্টিড রিসর্ট’-এর অবস্থানও বিশ্বের প্রাচীন হোটেলগুলির মানচিত্রে উজ্জ্বল।