আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ)। ফাইল ছবি।
আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ)-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করল পাকিস্তান সরকার। আর্থিক ভাবে পুরোপুরি বিধ্বস্ত দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশকে চাঙ্গা করতে আইএমএফের ৭০০ কোটি ডলারের ঋণের প্যাকেজের দিকেই আপাতত তাকিয়ে শাহবাজ় শরিফেরজোট সরকার।
পাকিস্তানের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলি জানিয়েছে, পাক অর্থমন্ত্রী ইশাক দারের সঙ্গে ইসলামাবাদে আজ থেকে বৈঠকে বসেছেন আইএমএফের পাকিস্তানের মিশন প্রধান নেথান পোর্টার। পোর্টার ছাড়া আইএমএফের তরফে উপস্থিত ছিলেন এস্থার পেরেজ় রুইজ়। পাক সরকারের তরফে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী আয়েশা পাশা, স্টেট ব্যাঙ্কের গভর্নর জামিল আহমেদ এবং পাক প্রধানমন্ত্রীর দুই সহকারী তারিক বাজওয়া ও তারিক মেহমুদ পাশা। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি স্তরে নানা আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা আইএমএফের প্রতিনিধিদের। পাক সরকারের সঙ্গে নানা চুক্তিও সই হওয়ার কথা এই সময়ের মধ্যে।
আইএমএফের তরফে আগে থেকেই কিছু শর্ত রাখা হয়েছিল পাক সরকারের কাছে। যার মধ্যে জ্বালানি ও শক্তি ক্ষেত্রে ভর্তুকি তোলা ছিল অন্যতম। তা ছাড়াও বড় রফতানি সংস্থাগুলিকে বিদ্যুতে ভর্তুকি বন্ধ করা, অসামরিক ও নিরাপত্তায় বেতন অন্যান্য খরচ ও অপ্রয়োজনীয় খরচ ছাঁটাইও ছিল শর্তের মধ্যে। পাক অর্থমন্ত্রী দার আজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সংস্কারের পথ ভেবে রেখেছে তাঁদের সরকার। আপাতত নবম পর্যালোচনা সম্পূর্ণ করতে আইএমএফের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন দার। নবম পর্যালোচনা সম্পূর্ণ হলে আইএমএফের থেকে প্রাথমকি ভাবে ১০০.২ কোটি ডলারের ঋণ পাবে পাকিস্তান। পোর্টারও জানিয়েছেন, তিনি নিশ্চিত যে আর্থিক সংস্কার ও ঋণ প্যাকেজের মাধ্যমে এই চরম আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে তুলতে সক্ষম হবে পাক সরকার।
আর্থিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পাক সরকার সরাসরি স্বীকার না করলেও কার্যত তাদের আইএমফের সব শর্তই ধাপে ধাপে মেনে নিতে হবে। জ্বালানিতে ভর্তুকি তুলে দিলে দেশের রাস্তায় বিক্ষোভের আগুন জ্বলবে বলে আঁচ করেছিল শরিফ সরকার। কিন্তু ৭০০ কোটি ডলারের প্যাকেজ না পেলে পরিস্থিতি যে আরও জটিল হয়ে উঠবে, তা-ও ভাল ভাবেই জানে তারা। দিন দু’য়েক আগেই জ্বালানির উপর থেকে ভর্তুকি তুলে দেওয়ায় পাকিস্তানে বিপুল দাম বেড়েছে পেট্রল, ডিজ়েল আর কেরোসিনের। সরকারের এই ধরনের পদক্ষেপে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি যে বাড়বে তা আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
নবম পর্যালোচনার শর্ত পূরণ করে প্রাথমিক ভাবে কিছুটা ঋণ পেলেও আগামী মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশের সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞেরা। কারণ পাকিস্তানের কাছে যে বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার বেঁচে রয়েছে, তা দিয়ে আর মাত্র তিন সপ্তাহের আমদানি চলতে পারে। সেই ভান্ডার ফুরোলে মাঝ ফেব্রুয়ারি থেকেই জ্বালানি সঙ্কট তীব্র হবে দেশে।
ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন অর্থনীতিবিদ আবিদ হাসানের বক্তব্য, ‘‘আমরা এখন কার্যত রাস্তার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছি। আইএমএফের শর্তগুলি কী কী, তা অবিলম্বে সরকারের উচিত দেশের মানুষকে সবিস্তার জানানো। না হলে খুব শীঘ্রই এ দেশের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতো হতে চলেছে।’’