মহম্মদ আল ফায়েদের সঙ্গে যুবরানি ডায়ানা। —ফাইল চিত্র।
ঠিক ২৬ বছর আগে ৩১ অগস্ট বিতর্কিত এক দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল ছেলে এবং তাঁর খ্যাতনামা বান্ধবীর। ৩০ অগস্ট মৃত্যু হল বাবার। পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, ৩০ অগস্ট ৯৪ বছর বয়সে মারা গিয়েছেন মিশরীয় বংশোদ্ভূত ধনকুবের মহম্মদ আল ফায়েদ,তাঁর ছেলে ডোডি আল ফায়েদ ও যুবরানি ডায়ানার মৃত্যুবার্ষিকীর ঠিক এক দিন আগে।
ডোডির সঙ্গে ব্রিটেনের যুবরানি ডায়ানার সম্পর্ক ঘিরে তোলপাড় হয় বিশ্ব। প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ডোডি ও ডায়ানার। মহম্মদ আল ফায়েদ ব্রিটেনের রাজপরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, তৎকালীন যুবরাজ চার্লসই ব্রিটিশ নিরাপত্তা সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে তাঁদের খুন করেছিলেন। যদিও ফরাসি পুলিশ তদন্তের পরে দাবি করে, বিষয়টি দুর্ঘটনাই ছিল। যুবরানি ডায়ানার সঙ্গে সমাজসেবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানেই প্রথম আলাপহয়েছিল মহম্মদের।
বিলাসবহুল সংস্থা হ্যারডসের সঙ্গে মহম্মদ আল ফায়েদের নাম অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। তাঁর জন্ম আলেকজ়ান্দ্রিয়ায় এক স্কুলশিক্ষকের ঘরে। ১৯৭০ সালের পরে মিশর থেকে ব্রিটেনে আসেন তিনি। ১৯৭৯ সালে ভাই আলি ফায়েদের সঙ্গে প্যারিস রিৎজ় হোটেল কিনে ব্যবসা শুরু করেন। উত্থানের সেই শুরু, যার শেষ হয় ১৯৮৫ সালে হ্যারডসের মালিকানায়। ব্রিটিশ ব্যবসায়ী রোলান্ড রাওল্যান্ডের সঙ্গে টক্কর দিয়ে হ্যারডস কিনে নেন মহম্মদ। ডোডি-ডায়ানার মৃত্যুর পরে তাঁদের নামেহ্যারডসে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করেছিলেন মহম্মদ।
দীর্ঘদিন ব্রিটেনে বসবাস করলেও সে দেশের নাগরিকত্ব পাননি মহম্মদ। ফ্রান্স অবশ্য তাঁকে লিজিয়ঁ দ্য’নার সম্মানে ভূষিত করেছিল, যা সে দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান। ব্রিটিশ ইতিহাস ও রাজনীতিতেও তাঁর গভীর প্রভাব অস্বীকার করা যায় না।
বহু বার ব্রিটেনের প্রশাসনের সঙ্গে তরজায় জড়িয়েছেন এই ধনকুবের। প্রথম সমস্যা শুরু হয় হ্যারডসের মালিকানা নিয়েই। সরকারের দাবি ছিল, নিজেদের ভুয়ো সম্পত্তি দেখিয়ে হ্যারডস কেনার ব্যবস্থা করেছিলেন মহম্মদ ও তাঁর ভাই আলি। এমনকি সেই বিষয়ে একটি তদন্তও হয় নয়ের দশকে। অভিযোগ অস্বীকার করেন দুই ভাই। ১৯৯৪ সালে ফের তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি কনজ়ারভেটিভ এমপিদের ঘুষ দিয়ে তাঁর হয়ে পার্লামেন্টে প্রশ্ন করতে বলেছেন। সেই বিতর্কে পদত্যাগ করেন টিম স্মিথ নামের এক এমপি। নিল হ্যামিলটন নামের আর এক জনকেও পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
১৯৯৭ সালে পশ্চিম লন্ডনের ফুলহ্যাম ফুটবল ক্লাব কিনে নেন মহম্মদ। মাইকেল জ্যাকসনকে খেলা দেখতে নিমন্ত্রণ করার পাশাপাশি তিনি সেটিকে একটি উচ্চমানের ফুটবল ক্লাবে পরিণত করেন। ২০১৩ সালে ক্লাবটি বিক্রি করে দেন তিনি। ২০১০ সালে কাতারের রাজপরিবারের কাছে বিক্রি করে দেন হ্যারডসও।
তবে, হ্যারডসের সঙ্গে মহম্মদের ছিল অন্তরের টান। এক সাংবাদিককে তিনি বলেছিলেন, মৃত্যুর পরে বিপণির একটি কাচের বাক্সে তিনি থেকেযেতে চান।